সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিউরোবিক জিম কি এবং কেন?

নিউরোবিক জিম কি এবং কেন?

মানসিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আবেগের আগ্রাসন, কাজের বাড়তি চাপ, জীবনযাপনের চাপ প্রভৃতি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্রমাগত মানবজীবনে আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাওয়া, কাজেকর্মে তাড়াহুড়ো, আধুনিক জীবনযাত্রায় নিত্যদিনের দুর্ভাবনা সরাসরি মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় (কার্ডিও-ভাসকুলার সিস্টেমে) প্রতিক্রিয়া ঘটায় বা প্রভাব ফেলে। হৃদযন্ত্রকে যদি অশ্বের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে মনকে বলতে হবে এর চালক বা অশ্বারোহী। জীবনের দৌড়ে যদি গতি বাড়ানোর কাজ করে মন, তবে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ে মনে এবং তার প্রভাবও পড়ে হৃদযন্ত্রে। আজকের মানুষ সময়ের সঙ্গে পালা দিয়ে ছুটছে। স্বাভাবিকভাবেই এর জন্য তাকে চড়া দামও গুনতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে অনেক মারণব্যাধির প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে।  কিন্তু মানসিক চাপজনিত অসুখের সংখ্যা ও ধরন দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। এসবের ভিতর দেহে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়টি অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। আমেরিকাসহ বিশ্বের বেশ কিছু উন্নত দেশে প্রধান ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে এই হৃদরোগ। যে কোনো রোগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে মানুষ মারা পড়ছে এই ঘাতক ব্যাধির কবলে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের পর বহুসংখ্যক মানুষ প্রতিনিয়ত এই ব্যাধির সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে। স্ট্রোকের ঝুঁকির ভিতর বসবাস করছে অগণিত মানুষ। পাশাপাশি জীবনযাপনে সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বহু লোক মৃত্যু-ঝুঁকি কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশে হৃদরোগীর সংখ্যা প্রচুর। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতেই তুলনামূলকভাবে হৃদরোগের হার বেশি। হার্ট অ্যাটাককে ভূমিকম্প হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। মানবদেহে এই ‘ভূমিকম্প’ আসতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে, কিন্তু এই ভূমিকম্প হয় কোনো পূর্বাভাস না দিয়েই। বর্তমানে হৃদরোগ প্রতিরোধে হলিস্টিক পদ্ধতি বেশ এগিয়েছে। কোনো ওষুধ গ্রহণ ছাড়াই কেবল খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারণে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ এনে হৃদরোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ সম্ভব। এ পদ্ধতিতে রয়েছে— নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ, খাদ্যগ্রহণবিষয়ক পরামর্শ, ধূমপান পরিত্যাগ, যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, মেডিটেশন, নিউরোবিক জিম। এছাড়া সুস্থ থাকার অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে নিউরোবিক জিম। কেউ কেউ আবার এ পদ্ধতির টোটাল প্যাকেজকে নিউরোবিক জিম বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। প্রধান প্রতিদিন সকাল বিকাল ৩০ মিনিট করে করতে হয়। এই পদ্ধতিতে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধকে একেবারে বাদ দেওয়া হয় না। পাশাপাশি ওষুধ সেবন চলতে থাকে। তবে রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে তখন  ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কয়েক সপ্তাহ খাদ্যগ্রহণে পরিবর্তন এনে, নিয়মতান্ত্রিক ব্যায়াম করে, চাপমুক্তির কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে এবং প্রাণায়াম, মেডিটেশন ও নিউরোবিক জিম চর্চা করে বুকের ব্যথা দূরীভূত করা সম্ভব। তাই হৃদরোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস, হলিস্টিক হেলথ

কেয়ার, ঢাকা। ফোন : ০১৭২১৮৬৮৬০৬

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর