রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স : সতর্কতা জরুরি

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স : সতর্কতা জরুরি

অতি সম্প্রতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেবল রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি সেবন বা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষক্ষেত্রে কেবল সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী কর্তৃক সরবরাহকৃত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি অনাগত ঝুঁঁকি। প্রতিনিয়ত অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হয়েই চলেছে। একটা অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেটিও কাজ করছে না। তখন অধিক কার্যকরী বা ব্রড স্পেকট্রাম এবং অনেক দামি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে যে ফল পাওয়া সম্ভব ছিল, দেখা যায় অধিক কার্যক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও সে ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় কোনো কোনো ( কেউ কেউ) চিকিৎসক প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে এমনকি ভাইরাস জ্বরেও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। এভাবে অপব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে এবং রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। আবার রোগীদের অনেকেই আর্থিক অসঙ্গতির কারণে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজেই ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক চেয়ে নিচ্ছে। কোনো কোনো ওষুধ বিক্রেতাও মুনাফার স্বার্থে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছে। অপরদিকে অনেক রোগীও কয়েকটা বা কয়েকদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সুস্থতা বোধ করলে মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেয়। মনে করে, ‘আমি তো ভালোই হয়ে গেলাম, ওষুধ খাবার আর দরকার কি’?-যা পুরোপুরি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এভাবে মাঝ পথে ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ এভাবে ওষুধের মেয়াদ পূরণ না করায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে এবং রোগীর বিপদও বাড়ছে। আবার প্রায়ই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাক্তার না থাকায় কোনো কোনো বিক্রেতারাই রোগীকে ব্যবস্থাপত্র এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না। এমনকি খাবার আগে-পরে বা কতদিন খেতে হবে, তারও নির্দেশনা থাকে না বা রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা হয় না।  

প্রতিরোধে করণীয় : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধে অবশ্যই সবার সচেতনতা দরকার। ডাক্তারদের অবশ্যই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক লেখার সময় সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে, অযথাই অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত হবে না। প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত অ্যান্টিবায়োটিকের উপযুক্ত মাত্রা এবং মেয়াদের ব্যাপারে রোগীকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে। রোগীদেরও সচেতন হতে হবে, তারা যেন যখন তখন নিজে থেকেই বা ফার্মেসি থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো

ওষুধ কিনে না খান। তাই সতর্ক হতে হবে।

লেখক : সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর