হাতি ও বাঘের আক্রমণে ভারতে প্রতিদিন গড়ে একজন করে মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। গত তিন বছর ধরে এই ভয়ংকর ধারাবাহিকতা চলে আসছে বলে ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিসংখ্যানেই তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই সর্বশেষ ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ২০১৪ সালের এপ্রিল ও চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে (১,১৪৩ দিন) ভারতের বিভিন্ন স্থানে বন্য পশুর আক্রমণে ১ হাজার ১৪৪ জন মারা গেছে।
এর মধ্যে ২০১৪-২০১৫ আর্থিক বছরে ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে ৪৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৭’এর ফেব্রুয়ারি পর্যস্ত ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির আক্রমণে এবং মে মাস পর্যন্ত বাঘের আক্রমণে মারা গেছে ২৭ জনের। অতএব এ মৃত্যুর হার কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত সরকারের ব্যাপক নগরায়ণ পরিকল্পনার কারণে নির্বিচারে বন উজাড় করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। মানুষ বন-জঙ্গল কেটে এই সব পশুর বাসস্থানের সুযোগ সংকুচিত করছে। দেখা দিচ্ছে পশুদের বাসস্থান ও খাবার সংকট। ফলে এই পশুরাই বেপরোয়া হয়ে মানুষের ওপর হামলা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর পিছনে রয়েছে ভারতের বিপুল জনসংখ্যা। দেশটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি, এই সংখ্যাটা প্রতি বছর বাড়ছে। এতে বাসস্থান হারিয়ে পশুরাও বাধ্য হয়ে জনপদগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
এব্যাপারে দিল্লি ভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’এর প্রতিষ্ঠাতা বেলিন্দা রাইট জানান, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে মানুষ ও বন্য পশুর মধ্যে এই ক্রমাগত দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আর ভারতের মতো দেশে জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির কারণেই এই ঘটনা ঘটছে’।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’এর পশু চিকিৎসক এন ভি কে আসরাফের মতে, পশুর আক্রমণে মানুষের মৃতুর বড় কারণ হল দেশটির বিপুল সংখ্যক মানুষ জীবনধারনের জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল। তিনি জানান, ‘খাদ্য ও অন্য বনজ পদার্থের খোঁজে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও গভীর অরণ্যে চলে যাচ্ছে, ফলে বাঘ বা হাতির আক্রমণের শিকার হচ্ছে’।
মানুষ ও বন্য পশুর এই দ্বন্দ্বের কারণে কখনও কখনও প্রাণীরাও হামলার শিকার হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৩৪৫টি বাঘ ও ৮৪টি হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই পশুর বিভিন্ন অঙ্গ পাচারকারীদের হাতে মারা গেছে। হাতির দাঁত পাচার করার জন্য তাদের হত্যা করা হয়।
বন অধিদফতরের মহাপরিচালক সিদ্ধান্ত দাস জানান, ‘পশুদের এলাকায় অরক্ষিতভাবে মানুষের প্রবেশের ফলে পশুদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের মৃত্যু কমাতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রচারণা শুরু করেছি’।
বিডি-প্রতিদিন/০২ আগস্ট, ২০১৭/মাহবুব