ভারতের আসামে সদ্য প্রকাশিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) খসড়া তালিকায় ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা বাদ পড়েছেন নাগরিকত্ব প্রমাণে সংশয় থাকার কারণে। বাদ পড়াদের প্রায় সবাই বাংলাভাষী এবং এদের বেশির ভাগই মুসলমান। সম্প্রতি দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপির অন্যতম নীতিনির্ধারক নেতা রাম মাধব জানিয়েছেন যে, নাগরিক তালিকা চূড়ান্ত করার পর যাদের নাম বাদ যাবে, তাদের আসাম থেকে বিতাড়িত করা হবে। বিজেপি নেতা রাম মাধবের এমন ঘোষণায় এখন শংকিত আসামের বাঙালিরা।
বিবিসির বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে যে ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ গেছে, তারা এই ঘোষণার পরে একদিকে যেমন বিতাড়িত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন, অন্যদিকে মনে করছেন নতুন করে তাদের ওপরে অত্যাচার না শুরু হয়।
রাম মাধব তার বক্তৃতায় তিনটি ডি-র ভিত্তিতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেছেন - ডিটেক্টশন, ডিলিশান এবং ডিপোর্টেশন। এখন নাগরিক তালিকা নবায়নের যে প্রক্রিয়া চলছে, তাকে তিনি ডিটেক্টশনের পর্যায়ে ফেলছেন। অর্থাৎ প্রক্রিয়া শেষ হলে ওই তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিদের তাড়িয়ে দেয়া হবে। তার এই ঘোষণা নিয়ে একদিকে যেমন তৈরি হয়েছে নতুন করে আশঙ্কা, অন্যদিকে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
যদিও বিজেপি এতদিন বলে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো থেকে সেই সব দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সেখানে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে দেশ ছেড়ে ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। আসামের ক্ষেত্রে যারা নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন, এমন হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। কিন্তু রাম মাধব নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া সবাইকেই বিতাড়নের কথা বলছেন- হিন্দু-মুসলমান কোনো ভেদ করেননি।
এখন বিশ্লেষকদের প্রশ্ন- তাদের কি তাহলে রাষ্ট্রহীন মানুষ করে দেয়া হবে? নাকি সবটাই করা হচ্ছে আগামী বছরের লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে!
এদিকে, এনডিটিভি জানিয়েছে, আসামে নাগরিক তালিকা প্রকাশকে সামনে রেখে অভূতপূর্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরি হয়েছে। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ১২০ কোম্পানি (২২ হাজার) সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ উপলক্ষে শুধু আসামই নয়, প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশও তাদের সীমান্তে জারি করেছে কড়া নজরদারি।
অবশ্য নাম না থাকলেও কারো বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া যাবে না- আসাম সরকারকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। আসামের অর্থমন্ত্রী হীমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘অযথা উদ্বেগের কিছু নেই। কারো বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবে না সরকার।’ এখন দেখার পালা, সত্যিকারার্থে ঘটনা কী ঘটতে যাচ্ছে!
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার