২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:৩৭
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কোথায়, কেন এতো প্রাণঘাতী

অনলাইন ডেস্ক

ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কোথায়, কেন এতো প্রাণঘাতী

করোনাভাইরাসের যে ধরনটি ইতোমধ্যেই চীনে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সেটি খুবই পরিচিত ও ভীতিকর বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করছেন।

ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসটি যে প্যাথোজেন পরিবারের, তার নাম করোনাভাইরাস, যার কারণে এর আগে সার্স ও মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল।

সার্সে আক্রান্তদের ৯% এবং মার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩৫% মারা গেছেন। হঠাৎ এই নতুন ভাইরাসটি কোত্থেকে এলো এবং এটা কতোটা ভয়াবহ?

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে ধরনের করোনাভাইরাস থেকে সার্স ও মার্স ভাইরাসের জন্ম হয়েছিল এবং এখন নতুন করে যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে সেগুলোর কোনটির উৎপত্তি মানুষ থেকে হয়নি। বরং এসবের জন্ম হয়েছে প্রাণী থেকে।

অনেক প্রাণীই তাদের শরীরে বিপদজনক ভাইরাস বহন করে কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য যে এসব ভাইরাস এক লাফে মানবদেহে চলে আসতে পারে না।

"বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বাধা আছে এবং ভাইরাসটি সেই বাধা অতিক্রম করতে পারে না," বলেন ওয়ারিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী প্রফেসর অ্যান্ড্রু ইস্টন।

"তবে কখনো কখনো কারো শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা যদি দুর্বল থাকে, অথবা অন্য কোন বিশেষ কারণ থাকে, তখনও ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরেও চলে আসতে পারে।"

আর এটি ঘটে ভাইরাসটির রূপান্তরের মধ্য দিয়ে।

অর্থাৎ প্রাণীর দেহে ওই ভাইরাসটির জিনগত গঠন যেরকম ছিল তাতে সে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের শরীরে আশ্রয় নিতে পারে।

"নতুন পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য ভাইরাসটিকে নিজের গঠনে কিছু পরিবর্তন ঘটাতে হয়।"

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঘটনা বিরল এবং এই প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাস যখন মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তখন সেটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

সব ধরনের করোনাভাইরাসই অতোটা বিপদজনক নয়। কিন্তু যেসব ভাইরাস পশুপাখি থেকে মানুষে চলে আসতে পারে সেগুলো খুবই বিপদজনক হয়।

প্রফেসর ইস্টন বলেন, "যখন একটি ভাইরাস এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে চলে যায় তখন আগে থেকে ধারণা করা যায় না যে এটি ঠিক কী ধরনের কাণ্ড ঘটাবে। তবে এটি তার নতুন আবাসস্থলে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়েই মারাত্মক রূপ নিতে পারে।"

এর পেছনে কারণ হচ্ছে, যখন ভাইরাসটি কোন প্রাণী থেকে হঠাৎ মানুষের শরীরে গিয়ে প্রবেশ করে, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা তাকে চিনতে পারে না।

কারণ এই ভাইরাস মোকাবেলায় মানবদেহের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। ফলে ভাইরাসটির কারণে মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা হয়।

"যেমন জলজ পাখি থেকে যে ফ্লু ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে আসে, তখন সংক্রমণের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়।"

ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে উঠেছিল ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালে। ওই ভাইরাসে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ধারণা করা হয় যে ওই ভাইরাসটি এসেছিল পাখি থেকে।

বর্তমানের করোনাভাইরসটিও যে এরকম প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে তার কোন ইঙ্গিত চিকিৎসকরা এখনও দেখতে পাননি। তবে অতীতেও এধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

করোনাভাইরাস কি দ্রুত ছড়াতে পারে?
এটা সুখবর - অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে - যে ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে আসে সেটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে না।

প্রফেসর ইস্টন বলেন, "এটা আরেকটা বাধা। ভাইরাসটিকে এই বাধাও অতিক্রম করতে হবে।"

তবে এই অবস্থারও দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং এরকম হলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে যেতে পারে।

"করোনাভাইরাসের মতো ভাইরাস খুব দ্রুত নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।"

ভাইরাসটি যদি নিজের জিনে কিছু পরিবর্তন ঘটাতে পারে তাহলে সেটি মানুষ থেকেও মানুষে ছড়াতে পারবে।

তখন এই ভাইরাসটি খুব দ্রুত বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

চীনে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এরকমটি ঘটেছে আর সেকারণেই ভাইরাসটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে ভাইরাসটি কতো দ্রুত ছড়াতে পারে সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানা সম্ভব হয়নি।

"যদি এই ভাইরাসটি কারো মধ্যে সংক্রমিত হয়ে থাকে সেটা হয় ওই লোকটির রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতায় দুর্বলতাসহ কিছু পরিস্থিতির কারণে।"

"এখন কথা হচ্ছে একজন সুস্থ মানুষ এই ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করতে পারবে কীনা। কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো খুব সহজেই ছড়াতে পারে আবার কিছু ভাইরাস সেটা পারে না। নতুন ভাইরাসটি কোন ধরনের এই প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন।"

কী করা দরকার?
দুঃসংবাদ হচ্ছে এর কোন ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। "ভাইরাসনাশক ওষুধের সংখ্যা খুবই কম।"

তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধে আরো কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সেগুলো খুব সহজ কিছু ব্যবস্থা: যেমন হাত ধোওয়া এবং টিস্যু ব্যবহার করা।

প্রফেসর ইস্টন বলেন, "পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদেরকে সব ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এখনও পর্যন্ত এটাই আমাদের অস্ত্র যা দিয়ে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারি।"

এছাড়াও এই ভাইরাসটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষ কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটাও জরুরি।

"যারা আক্রান্ত হবেন তাদেরকে খুব দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে যাতে তাদেরকে সহযোগিতা করা যায়। আসল কথা হচ্ছে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে এদের মাধ্যমে ভাইরাসটি আর ছড়াতে না পারে।"

সার্স ও মার্স ভাইরাসের ঘটনায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে।

এই অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগানো প্রয়োজন। 

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর