বাবা ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় মুখ। ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০৭ সাল। দীর্ঘ ফিল্মি ক্যারিয়ার তার। আর ছেলের ক্যারিয়ার মাত্র ১৯৯৮-২০১০ সাল! বাবার নাম যেখানে আজও সকলের মুখে শোনা যায়, স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছেন ছেলে। কেন এমন হল?
যার কথা হচ্ছে তিনি ফারদিন খান। স্টারডমের বোঝা জন্মের পর থেকে ফারদিন খানের উপরে চেপে বসেছিল। কারণ ফারদিনের জন্ম হয়েছিল ফিরোজ খানের ঘরে। জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খানের ছেলে ফারদিন।
ফারদিন খানের বেড়ে ওঠা মুম্বাইয়ে। স্টার কিড হওয়ায় বলি-মহলে ফারদিনের প্রচুর বন্ধু-বান্ধব ছিল। কারণ অন্যান্য স্টার কিডের সঙ্গেই তার বেড়ে ওঠা।
মুম্বাইয়ের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দেন ফারদিন। সেখানে আমিশা পাটেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমিশাও সে সময় আমেরিকাতেই পড়ছিলেন।
পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন ফারদিন। বাবার দেখানো রাস্তাতেই ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন ঠিক করেন তিনি। মাথার উপরে অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক বাবা এবং ফারদিন খানের নিজের লুক, সব মিলিয়ে বলিউডে সাফল্য ছোঁয়া তার কাছে অনেকটাই সহজ ছিল।
১৯৯৮ সালে ফিরোজ খানের প্রযোজনায় ‘প্রেম অঙ্গন’ ছবিতে অভিষেক হয় ফারদিনের। যেহেতু ফিরোজ খান এই ফিল্মে তার ছেলেকে লঞ্চ করতে যাচ্ছিলেন, তাই সকলের নজর ছিল এই ফিল্মের উপর। ফারদিন খান কতটা বাবার মর্যাদা রাখতে পারবেন, সেটাই চ্যালেঞ্জ ছিল তার কাছে।
তবে এই ফিল্ম বক্স অফিসে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। এরপর রামগোপাল বার্মার সঙ্গে দেখা করেন ফিরোজ খান। ছেলের জন্য কিছু ভাল ফিল্মের কথাবার্তা হয় দু’জনের মধ্যে। ফারদিন খানকে ভাল স্ক্রিপ্টে অভিনয়ের সুযোগ দেওযার প্রতিশ্রুতি দেন রামগোপাল বার্মা।
এরপর রামগোপাল বার্মা তিনটি ফিল্মে সই করান ফারদিন খানকে। এগুলো হল ‘জঙ্গলি’, ‘প্যায় তুনে ক্যায়া কিয়া’ আর ‘লাভ কে লিয়ে কুছ ভি কারেগা’।
প্রথম দুটো ফিল্ম বক্স অফিসে মোটামুটি চলেছিল, কিন্তু শেষ ফিল্মটা একেবারেই পছন্দ করেননি দর্শক।
২০০১ সালের ৫ মে নার্কোটিক বিভাগের কাছে খবর আসে, মুম্বাইয়ের জুহুতে একটি ড্রাগ ডিল হতে যাচ্ছে। ওই দিন সূত্রের খবর অনুযায়ী, সাধারণ পোশাকে পুলিশ এক ব্যাংকের এটিএমের কাছে পৌঁছে যায়। রাত ১টা নাগাদ সেখানে একটি গাড়ি পৌঁছায়।
এক ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে এটিএমে যান। তার ঠিক পরেই আরও এক ব্যক্তি ওই এটিএমে ঢোকেন। পুলিশ তখনই গিয়ে তাদের দু’জনকেই ধরে ফেলে। দেখা যায়, তাদের মধ্যে একজন ফারদিন খান। আর দ্বিতীয় জন ছিলেন একজন মাদক ব্যবসায়ী। যিনি বলিউডে ড্রাগ সরবরাহ করে থাকেন।
ফারদিন খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছে থেকে এক গ্রাম ও তার গাড়ি থেকে নয় গ্রাম কোকেন মিলেছিল। ফারদিনের বাবা তার পাশে দাঁড়ান। ছেলের বন্ধুদের নামে দায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হতে বসেছিল ফারদিনের। তুমুল বিতর্ক শুরু হয় তাকে ঘিরে। বাবার কৃপায় ফের একবার ক্যারিয়ার শুরু করার চেষ্টা করেন ফারদিন খান। ফিরোজ খানের প্রযোজনায় ‘জনাসিন’ ফিল্ম করেন। ফিল্মের নায়িকা ছিল সেলিনা জেটলি। সে সময় সেলিনার সঙ্গে সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এরপর ২০০৪ সালে ‘দেব’ ফিল্মে অমিতাভ বচ্চন এবং কারিনা কাপুরের সঙ্গে অভিনয় করেন। এই ফিল্ম সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল। কিন্তু এর থেকে ফারদিন খানের ক্যারিয়ারে কোনও প্রভাব পড়েনি। এরপর ফারদিন খান যা যা সিনেমা করেছেন, তার বেশির ভাগই ছিল মাল্টিহিরো ফিল্ম।
যেমন ‘নো এন্ট্রি’, ‘হে বেবি’-র মতো ফিল্মে ভাল কাজ করেছেন তিনি। ২০১০ সালে তার শেষ ফিল্ম ছিল ‘দুলহা মিল গায়ে’। এরপর আর কোনও ফিল্মে তাকে দেখা যায়নি।
২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে নাতাশা মাধবনীকে বিয়ে করেন ফারদিন। শোনা যায়, ২০১০ সালের পর তিনি নিজের পরিবারকে নিয়েই নাকি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই ফিল্মে তাকে সেভাবে দেখা যায় না।
২০১১ সালে ফারদিন খান মাদক মামলা থেকে পুরোপুরি রেহাই পান। তিনি যে রিহ্যাবে গিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, আদালতে সেই সার্টিফিকেট পেশ করেন। তার ক্যারিয়ার যত না দীর্ঘ ছিল, তার মামলা-আদালত তার থেকেও বেশি দীর্ঘ ছিল, এমনই গুঞ্জন বলিউডে। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম