৬ আগস্ট, ২০২০ ১৫:৪৭

ট্রাম্পের আল্টিমেটাম : বেকার ভাতা নিয়ে সমঝোতায় ব্যর্থ হলে কাল নির্বাহী আদেশ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

ট্রাম্পের আল্টিমেটাম : বেকার ভাতা নিয়ে সমঝোতায় ব্যর্থ হলে কাল নির্বাহী আদেশ

করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া ৩ কোটি আমেরিকানের সাপ্তাহিক বেকার ভাতার পরিমাণ নিয়ে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা শুক্রবারের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একক ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ট্রাম্প গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনায় বেকাররা ভাতা না পেলে অর্থনীতি আরও নাজুক হবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও ডেমোক্র্যাটরা নমনীয় হচ্ছে না। তারা মানুষের দুর্দশাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু আমি সেটি হতে দেব না। শুক্রবারের মধ্যে সন্তোষজনক সমঝোতায় উপনীত হতে ব্যর্থ হলে, আমার ক্ষমতাবলে আমি নির্বাহী আদেশ জারি করবো সাপ্তাহিক বেকার ভাতা পুনরায় চালুর জন্যে।  

লকডাউনের কারণে গত মার্চ মাসে বেকার আমেরিকানদের সাপ্তাহিক ৬০০ ডলার করে প্রদানের একটি বিল পাশ হয়, যা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বহাল ছিল। ১ আগস্ট থেকে পুনরায় ওই বিলটি চালু রাখার জন্য ১৫ মে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা ‘হিরোজ অ্যাক্ট’ নামে ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি বিল পাশ করেছে। কিন্তু রিপাবলিকানরা সাপ্তাহিক বেকার ভাতা কমিয়ে ২০০ ডলার করতে চাচ্ছে। এজন্য দুই সপ্তাহ আগে সিনেটে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউজ এবং ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গত ১০ দিন থেকেই লাগাতার বৈঠক চলছে। 

নাম গোপন রাখার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, রিপাবলিকানরা ২০০ ডলার থেকে ৪০০ ডলার করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাটরা অনড় রয়েছেন ৬০০ ডলারে। এছাড়া মাথাপিছু ১ হাজার ২০০ ডলারের চেক সরাসরি আমেরিকানদের প্রদানে উভয় পক্ষ সম্মত রয়েছে। 

করোনায় বিপর্যস্ত লোকজনকে ভাড়া অনাদায়ের জন্যে বাসা থেকে উচ্ছেদ-মামলা ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিতের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি অনুযায়ী স্টেট, সিটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়েও রিপাবলিকানরা ঐক্যমতে উপনীত হতে পারেননি। 

সূত্রটি উল্লেখ করেছে, উভয়পক্ষ নমনীয়ভাব বিরাজ করছে। শুক্রবারের মধ্যে সন্তোষজনক একটি সমঝোতা হবে এবং সোমবার কংগ্রেসে করোনা-রিলিফের দ্বিতীয় বিল ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। 

করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকার বেশ কয়েকটি স্টেট নাজুক হয়ে পেড়েছে। এতে করে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক হতে পারেনি। অফিস-আদালতও চলছে সীমিত পরিসরে। রেস্টুরেন্ট-বার চালু করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে। এসব কারণে এখনো ৩ কোটি আমেরিকান বেকার রয়েছেন। 

রিপাবলিকানরা মনে করছেন করোনার আগে যারা সপ্তাহে ৫০০ ডলারের বেশি বেতন-মজুরি পাননি, তারা পেয়েছেন ৬০০ ডলারের সাথে নিজ নিজ স্টেটের হিস্যা। গড়ে একেকজন ৮ শতাধিক ডলার করে পাওয়ায় কাজে যোগদানে আগ্রহী হচ্ছেন না। এজন্য সাপ্তাহিক বেকার ভাতা কমানোর পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখাচ্ছে রিপাবলিকানরা। তার সাথে হোয়াইট হাউজের একটি অংশও যোগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রথম করোনা রিলিফ তথা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিলে সাপ্তাহিক বেকার ভাতা ৬০০ ডলার নির্ধারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল। 

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রস্তাবিত বিলের সাথে বুধবার নতুন আলোচনায় এসেছে ডাক বিভাগ। মানুষ চিঠিপত্রের বিকল্প হিসেবে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেছে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে। গত বছর থেকেই তারা কংগ্রেসে দেন-দরবার করছেন ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের জন্যে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসম্মতি জানিয়েছেন। অথচ করোনার পরিপ্রেক্ষিতে সিংহভাগ ভোটারই ডাকযোগে ব্যালট পাঠাচ্ছেন। চলমান দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে অধিকাংশ স্থানেই ব্যালটগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেনি। ডাক বিভাগের বাজেট ঘাটতির কারণে কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে। তাই চিঠিপত্র বিলি করতে বিলম্ব ঘটছে। 

৩ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অনুপস্থিত ভোটারের ব্যালট ডাকযোগে যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাতে ছাঁটাইকৃত কর্মচারীদের পুনর্বহালের বিকল্প নেই বলে ডেমোক্র্যাটরা উল্লেখ করেছেন। বুধবার হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে ডেমোক্র্যাটদের সমঝোতা বৈঠকে এ বিষয়টি প্রাধান্য পায় বলে জানা গেছে। এতে পোস্ট মাস্টার জেনারেল লুইস ডিজয় উপস্থিত ছিলেন। 

তিনি অবিলম্বে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন কংগ্রেসের প্রতি। অর্থাৎ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিলে ডাক বিভাগকে রক্ষার ব্যাপরটিও যুক্ত করতে হচ্ছে। যদিও এর আগে ট্রাম্পের আগ্রহে এফবিআই-এর সদরদপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে নতুন করে নির্মাণের একটি প্রস্তাব দিয়েছে রিপাবলিকানরা। তার সাথে অনেক রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা দ্বিমত পোষণ করেছেন এই বলে যে, করোনার সাথে এফবিআইয়ের নতুন সদরদপ্তরের সম্পর্ক কী। সেটি তো আলাদাভাবে বিল করা যেতে পারে। স্মরণ করা যেতে পারে, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহেই কংগ্রেস ছুটিতে যাবার কথা। কিন্তু করোনা-রিলিফ বিল পাশের স্বার্থে সকলেই ছুটি বাতিলের পক্ষে এবং ইতিমধ্যেই ক্যাপিটল হিলে নিজ নিজ অফিস কক্ষে ঘুমানো শুরু করেছেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর