প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনা আক্রান্তের দিক থেকে আমেরিকার পরই অবস্থান ভারতের (দ্বিতীয়)। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮৬ জনের।
করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ।
জানা গেছে, দেশটির মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও হিমাচলের পর কেরালাতেও এই সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
কেরালায় শুরু হয়েছে হাঁসের মড়ক। ওই রাজ্যের আলাপুঝা ও কোয়াট্টাম জেলায় একাধিক মরা হাঁসের শরীরে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে কন্ট্রোল রুম খুলেছে প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই দুই জেলায় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে হাঁসের মড়ক চোখে পড়ে। সেই সময় ভোপালে এইচ৫এন৮ পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। ৮টি নমুনার মধ্যে ৫টিতে বার্ড ফ্লু ধরা পড়ে।”
প্রায় ১ হাজার ৫০০ হাঁসের মৃত্যু হয়েছে নেনদুরের একটি হাঁসের খামারে। কুট্টানন্দ এলাকার হাঁসের খামারেও বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার হাঁসের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে আরও ৩৬ হাজার হাঁস মারা হতে পারে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, যে কৃষকদের গৃহপালিত পশুকে মারতে হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবে কেরালা সরকার।
কয়েকদিন আগেই রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে কাকের মড়ক দেখা গিয়েছিল। সেখানেও পরীক্ষা করতে বেরিয়ে আসে, বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েই কাকের মৃত্যু হচ্ছে। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কাকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এই দুই রাজ্যের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এলাকা নির্দিষ্ট করে সেখানে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত চিহ্নিত করার কাজ করতে চেষ্টা করছে প্রশাসন।
হিমাচল প্রদেশেও পরিস্থিতি ক্রমে কঠিন হয়েছে। অতিথি পাখির মধ্যে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, যার ফলে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ অতিথি পাখির মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
রাজ্যের বন দফতরের সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান অর্চনা শর্মা জানিয়েছেন, বরেলির ভারতীয় পশুপালন গবেষণা কেন্দ্রের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বার্ড ফ্লু-রয়েছে এই পাখিদের শরীরে। যদিও একেবারে নিশ্চিত হতে ভোপালে প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। খবর দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকেও।
অন্যদিকে, হিমাচলের কাংড়া জেলায় সংক্রমণ এড়াতে ইতিমধ্যেই মুরগি, মাছ, মুরগির ডিম বিক্রির উপর নিধেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। জেলার ৪টি সাবডিভিশনে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো করোনা সংক্রমণের মধ্যে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছে প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত ৪ রাজ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, রোগ যে আরও ছড়িয়ে পড়বে না, তেমনও কোনও নিশ্চয়তা নেই। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম