বছরটা ছিল ২০০০! ওই সালেই মুক্তি পেয়েছিল বলিউড ব্লকবাস্টার ‘কহো না প্যার হ্যায়’ ছবিটিতে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল হৃত্বিক রোশনের। সেই সাথে আরও একজনের ক্যারিয়ারে বড় সড় পরিবর্তন ঘটেছিল তিনি হলেন বাবুল সুপ্রিয়। বাবুলের কণ্ঠে আর হৃত্বিকের লিপে সেই সময় ঝড় তুলেছিল ‘দিল নে দিল কো পুকারা’ গানটি। তারপর প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসাবে আর ফিরে তাকাতে হয়নি সুনীলচন্দ্র বড়াল ও সুমিত্রা বড়ালের সন্তান বাবুল সুপ্রিয়কে। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে একসময় গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন তিনি।
তেমনটাই ২০১৪ সাল বদলে দিয়েছিল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। ওই বছরের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূলের প্রার্থী দোলা সেনকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল।
শোনা যায় সেসময় যোগগুরু বাবা রামদেব নাকি বাবুলকে বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর বাবুলও তাতে রাজি হয়ে যান। বাকিটা শুধুই ইতিহাস। সেবার রাজ্যে ২ টি আসন পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। সাংসদ হয়েই সোজা নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পান তিনি। তাকে নগরোন্নয়ন, আবাসন ও দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। পরে দফতর পরিবর্তন করে তাকে ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই একই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার সাংসদ নির্বাচিত হন এবং ফের মোদি-২ মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। এবার তাকে করা হয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। কিন্তু গত বুধবার (৭ জুলাই) থেকেই হঠাৎই বদলে গিয়েছে গোটা চিত্র।
দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর মোদি মন্ত্রিসভায় যে বড় আকারে সম্প্রসারণ হয়, সেখানে বাংলা থেকে চার জন নতুন মুখের জায়গায় হলেও, বাবুলকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ, হতাশাও প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল বাবুলকে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাকে কেন মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতে হল। হঠাৎ করেই বাবুলের ওপর গেরুয়া শিবিরের এই অনাস্থা কেন? সেই সাথে এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে বাবুল সুপ্রিয়র ভবিষ্যত কোন পথে গড়াতে চলেছে?
মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি যেভাবে সরব হয়েছিলেন তাতে একটা মহলে জোর চর্চা চলছে বাবুল সুপ্রিয় না কি রাজনীতি ছাড়তে পারেন। কেউ আবার বলছে রাজনীতি না হলেও বিজেপির সঙ্গ ছাড়তে পারেন তিনি। যদিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বার্তা দিয়েছিল যে যাদের এই দফায় মন্ত্রী রাখা হয়নি তাদের দলীয় সংগঠনের কাজে লাগানো হতে পারে, তবুও জল্পনা থামছে না।
২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে ঝালমুড়ি থেকে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বাবুল। সেসময় বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন এই গায়ক-রাজনৈতিক ব্যক্তি। বাবুল যদিও বলেছিলেন ‘এটা কেবলমাত্র রাজনৈতিক সৌজন্যতা।’ আশ্চর্যজনক ভাবে গত বুধবার মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ও তাতে বাবুলের বাদ পড়া নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছিল সেই মমতা দিদিকে। বাবুলের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে মমতা বলেছিলেন ‘ওরা কাকে মন্ত্রী করবে, কাকে সান্ত্রী করবে, কাকে বাদ দেবে, কাকে দেবে না, আজকে কাকে তুলে আনবে, কালকে কাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, এটা ওদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এসব অনেক দেখেছি। আজ বাবুল সুপ্রিয় খারাপ হয়ে গেছে।...’
এর মধ্যেই ট্যুইটারে বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ছেড়ে সদ্য কংগ্রেসে ফেরা মুকুল রায়কে ফলো করা শুরু করেন বলে রটনা ছড়িয়েছে। ফলে আসানসোলের সাংসদকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
বিজেপির ভিতরের খবর ছোট ছোট একাধিক ঘটনা বাবুলের গদিচ্যুত হওয়ার পিছনে অনুঘটকের কাজ করেছে। এবারের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে টালিগঞ্জ কেন্দ্রে বাবুলকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন- এমনটাও শোনা গিয়েছিল। যদিও তৃণমূলের প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে বাবুলকে। কিন্তু এই হার কোন মতেই হজম করতে পারেননি বাবুল। বিধানসভার নির্বাচনের আগে যেভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পরে যায়, তা নিয়েও বিরোধিতা করেছিলেন বাবুল। যা নিয়ে দলের সাথে তার মতবিরোধ তৈরি হয়।
এর মাঝেই সম্প্রতি নিজের লোকসভা কেন্দ্রে বাবুলের বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়েছে। ভোটের ফলাফলের পর থেকেই না কি বাবুলকে দেখা যায় নি এমন দাবি তুলে তার নামে নিখোঁজ হওয়ার পোস্টার দেখা যায়। শোনা যাচ্ছে সম্প্রতি রাজনীতির থেকে গানের দিকেই বেশি মন দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। আর এই আবহেই বাবুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল