২০২১ সালের অক্টোবরে এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভায় ‘বিমান শিল্প’ ২০৫০ সালের মধ্যে নেট ‘জিরো কার্বন’ নির্গমন অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সে আশার উত্তেজনায় পানি ঢেলে দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণ।
সংগঠনটি সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ইউরোপের আকাশে আসন্ন শীতকালীন মৌসুমে লাখের বেশি ‘ভূতুড়ে ফ্লাইট’ পরিচালিত হবে। আর এসব ভূতুড়ে ফ্লাইটের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ ১৪ লাখ গাড়ির কার্বন নির্গমনের সমান।
মহামারির শুরুর দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক সীমানাগুলো বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ভ্রমণের চাহিদাও হঠাৎ নিচে নেমে যায়। এই সময় ‘ভূতুড়ে ফ্লাইট’ একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা থেকেই বিমান কোম্পানিগুলোর শূন্য অথবা প্রায় যাত্রীশূন্য ভ্রমণ পরিচালনা করে। কিন্তু সমস্যা হলো, দুই বছর পরেও বিমানগুলো একই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ভূতুড়ে ফ্লাইটের যে বিশ্লেষণ দিয়েছে, গত ডিসেম্বরে লুফথানসা বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কারেস্টেন স্ফোরের এক সাক্ষাৎকারেও একই আভাস মেলে। তিনি জানান, ইউরোপীয় আইনের বাধ্যবাধকতার জেরে আগামী ৬ মাস বিমান সংস্থাটিকে ১৮ হাজার অতিরিক্তি ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে।
লুফথানসা বিমান ইউরোপীয় বাজারে ১৭ শতাংশ ফ্লাইট পরিচালনা করে। এটা থেকে ধারণা নিয়ে গ্রিনপিসের অনুমান, ইউরোপের মোট ভূতুড়ে ফ্লাইট ২১ লাখ টন কার্বন নির্গমন করবে।
এই বিশ্লেষণ পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনককর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেছেন, ব্রাসেলস এয়ারলাইন বিমান স্লট রক্ষা করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ৩ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। যদিও যুক্তরাজ্যে অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইট বাতিলে সরকারের কাছে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
গ্রিনপিসের মুখপাত্র হারজেগ চস্টার বলেছেন, আমরা মারাত্মক জলবায়ু সংকটের মধ্যে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতর পরিবহন সেক্টর তড়িৎগতিতে নির্গমন বাড়াচ্ছে। ভূতুড়ে ফ্লাইট বরফের চূড়ায় সূর্যের কণা মাত্র।
তবে লুফথানসা বলছে, তারা বিমানগুলো পূর্ণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে তাদের বেগ পোহাতে হচ্ছে।
সিএনএনকে বিমানটির একজন মুখপাত্র বলেন, অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইটগুলো খালি অথবা ভূতুড়ে ফ্লাইট বলা যথার্থ নয়। এগুলো তালিকাভুক্ত ফ্লাইট। মূলত করোনার কারণে আসন পূর্ণ হয়নি। সামান্য চাহিদা সত্ত্বেও লুফথানসা গ্রুপকে ইইউ বিমানবন্দরে উড্ডয়ন নিশ্চিতের স্বার্থে আবশ্যিকভাবে ফ্লাইট চালু রাখতে হবে।
লুফথানসা আরও বলেছে, করোনার ওমিক্রন ধরনের আবির্ভাবের কারণে আসন্ন মৌসুমে তারা যে অনুমান করেছিলেন সেটা পূর্ণ হবে না। কারণ, করোনা বিশেষ করে ওমিক্রন সংকট তাৎপর্যপূর্ণভাবে সাধারণ মানুষ এবং চাকরিজীবীদের ভ্রমণে বিধি-নিষেধ বাড়িয়েছে।