সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এরই মধ্যে সোমবার ৩৩তম দিনে গড়িয়েছে রুশ অভিযান। বিগত ৩২ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি নগরী দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার উপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সঙ্গে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়াও।
শীর্ষে ব্রিটেন
রাশিয়ার উপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ‘কাস্টেলাম ডট এআই’। তাদের হিসাবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ক্রেমলিনের উপর সবচেয়ে বেশি ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ২১ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেনের ডোনবাসকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার ওপর দেশটির আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৮৬১টি। এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন।
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার উপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি।
আরও বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬।
টার্গেটে মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরাও
কানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও। চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ ১০ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও। সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা।
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি। গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার উপর ৫২৩টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
অন্যদের চেয়ে কম যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত মিত্র দেশগুলোর তুলনায় তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট ছিল। কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের উপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ২৮ মার্চ কাস্টেলামের ওয়েবসাইটে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬৯০টি।
তৎপর জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান। রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি। তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও। ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ১৯৪টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ। মোট সাত হাজার ৮৮৩টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ১২৯টি দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পরে। এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬৷ এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)।
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত পাঁচ হাজার ১২৯টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির উপরে। চার হাজার ৫২৪টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত। আর ৫৯৪টি দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উপরে।
রাশিয়ার পাল্টা জবাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন। অন্যদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়াও মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে। বুধবার পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুশ মুদ্রা ‘রুবলে’। তথ্যসূত্র: কাস্টেলাম, ডয়েচে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/কালাম