২ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:০৬

যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক বিষন্নতায় জর্জরিত টিনএজাররা

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক বিষন্নতায় জর্জরিত টিনএজাররা

ফাইল ছবি

হাই স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে দু:খ আর হতাশাবোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধক সংস্থা তথা সিডিসি পরিচালিত সর্বশেষ এক জরিপে উদ্বেকগজনক এ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। ১ এপ্রিল তা প্রকাশিত হয়েছে প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে। 

‘ইয়ুথ রিস্ক বিহেভিয়ার সার্ভে’ শিরোনামের এ জরিপ অনুযায়ী দেখা যায় যে, উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্রমাগত দুঃখ অথবা হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ২২ শতাংশ বলেছে, তারা ২০২১ সালে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল এমন দু:খবোধ থেকে পরিত্রাণের অভিপ্রায়ে। জরিপ ফলাফল অনুযায়ী এমন নাজুক পরিস্থিতিতে নিপতিতদের মধ্যে বালিকার সংখ্যাই বেশী। জরিপ প্রতিবেদনের ওপর আলোকপাতকালে যুক্তরাষ্ট্রের গভর্ণরদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ন্যাশনাল গভর্ণরস এসোসিয়েশন’র চেয়ারপার্সন ফিল মারফি (নিউজার্সি) বলেন, তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আমি সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছি। কারণ, এটি এমন একটি সমস্যা যা রাষ্ট্র বা পার্টিলাইন উভয়কেই অতিক্রম করে। 

‘আই ম্যাটার কলরাডো ডট অরগ’ নামক একটি সংস্থা এই জরিপ চালায় অংশগ্রহণকারীদের নাম গোপন রাখার শর্তে। জরিপ পরিচালনাকারিরা স্টেটের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যে বিনামূল্যে মানসিক চিকিৎসা কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দিয়েছেন। ইউটাহ স্টেটের শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসিক বিষন্নতার ছাপ পরিলক্ষিত হওয়া মাত্রই অবিলম্বে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হওয়ার বিধান রয়েছে, যেখানে ঐ শিক্ষার্থীর পরিচয় গোপন থাকে। কলরাডো স্টেটেও শিক্ষার্থীর জন্যে বিনামূল্যে অন্তত: ৬টি সেশনের রীতি চালু করা হয়েছে। 

ইউটাহ স্টেটের গভর্ণরর স্পেন্সার কক্স (রিপাবলিকান) বলেছেন, আমরা জানি এ কর্মসূচির মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হচ্ছি। উল্লেখ্য, এই গভর্নর টিনএজার থাকাবস্থায়ই মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। সে সময় তিনি আত্মহত্যার চিন্তা করেছিলেন। তবে ঘনিষ্ঠ বন্ধু/সহপাঠিরা তাকে বাঁচিয়েছেন। আরো কয়েকটি স্টেট প্রশাসন মানসিক বিষন্নতায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্যে ত্বড়িত চিকিৎসার প্রকল্প গ্রহণের কথা ভাবছে সিরিয়াসলি। পেনসিলভেনিয়ার গভর্ণর জোশ শ্যাপিরো  (ডেমক্র্যাট) প্রতিটি স্কুলেই একজন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা নিয়োগের জন্যে জনমত সুসংহত করছেন। এজন্যে তার নতুন বাজেটে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব করেছেন। এর আগে তিনি স্টেটের এটর্নী জেনারেল থাকাবস্থায় ‘সেইফটুসে’ সিস্টেমের প্রচলন করেছিলেন ছাত্রদেরকে সহিংসতার রিপোর্ট করার জন্যে। সেটি ছিল রিপোর্টকারির নাম গোপন রাখার শর্তে। এই কর্মসূচির প্রথম ৫ বছরে লক্ষাধিক রিপোর্ট জমা হয়-যার ৭৫% এসেছিল মানসিক বিষন্নতায় আক্রান্ত তরুন-তরুণীর কাছে থেকে। 

শিক্ষার্থীরা এমন কাউকে পাশে চায় যে বা যিনি তাকে সাহায্য করতে পারে, মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি দেয়ার মত আচরণ করতে পারে। তারা এটাও চায় যে, আশপাশের লোকজন এমন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলুক। 

ওহাইয়োর স্টেট গভর্ণর মাইক ডিওয়াইন (রিপাবলিকান) গত গ্রীষ্মে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছেন, ইতিমধ্যেই ১৬ হাজার তরুন-তরুণীকে বিশেষ আচরণগত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। ভার্জিনিয়ার গভর্ণরর গ্লেন ইয়ংকীন (রিপাবলিকান) ‘বৃহত্তর প্রাক-সংকটসহ একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল আচরণগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ২৩০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব করেছেন। এক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারের সহযোগিতার বিকল্প নেই বলে সর্ংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন। কারণ, অন্তত: ৯৮৮টি হটলাইন চালু রাখতে বিপুল অর্থ দরকার। করোনা মহামারিকালিন ফেডারেল বরাদ্দ থেকে এখনও কোন কোন স্টেট মানসিক বিষন্নতার চিকিৎসা-ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হলৌ অধিকাংশেরই বাজেট ফুরিয়ে গেছে। 

কংগ্রেস যদি এক্ষেত্রে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয় তাহলে কঠিন এক পরিস্থিতিতে নিপতিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের হাই স্কুল শিক্ষার্থীরা-যার খেসারত দিতে হবে গোটা জাতিকে বছরের পর বছর। কারণ, আজকের শিক্ষার্থীরাই হচ্ছে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক। তারা যদি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম না হয় রাষ্ট্র চালাবে কীভাবে-এমন মন্তব্য জরিপ পরিচালনাকারিগণের। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর