অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রোমান যুগের আরো চারটি কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নতুন করে এই চারটি কবরের সন্ধান পান ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
এর আগে গত জুলাই মাসে সেখানে ১২৫টি কবরের সন্ধান পাওয়া যায়।
ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে, ২০০০ বছর আগের এই কবরগুলোর আবিষ্কার গাজায় বসতি, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের দীর্ঘ ইতিহাস নির্দেশ করে।
স্থানীয় পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পুরাকীর্তি অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল আবু রেদা বলেন, “ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততায় ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণে রোমান যুগের এই কবরস্থানে মাঠ গবেষণা কার্যক্রম চলছে।
“চলমান এই কাজ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলো উদঘাটনের দীর্ঘ যাত্রার অংশ, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেছে,” যোগ করেন তিনি।
গাজা উপত্যকার পুরাকীর্তি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন করে এই চারটি কবরের সন্ধান পাওয়ার পর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রায় ৪,০০০ বর্গ মিটার (৪৩,০০০ বর্গফুট) এলাকায় বিস্তৃত মোট উন্মোচিত কবরের সংখ্যা ১৩৪টিতে দাঁড়ালো।
ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক ফাদেল আল-ওটল বলেছেন, রোমান যুগের এই কবরস্থানে বর্তমানে গবেষণা, পুনরুদ্ধার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে এটি দর্শক এবং গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
ফাদেল আল-ওটল সেখানে দুটি মূল্যবান সীসা কফিনের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন, যেগুলোর একটিতে আঙ্গুর চাষের পুরাকীর্তি দিয়ে খোদাই করা এবং অন্যটিতে খচিত রয়েছে পানিতে ডলফিন সাঁতার কাটার দৃশ্য।
কিছু কবরে পিরামিডের মতো নকশা দ্বারা বিশেষভাবে আলাদা করা হয়েছে এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মৃৎপাত্র ও ধাতুর টুকরাও পাওয়া গেছে।
ফাদেল আল-ওটল ‘ইন্তিকাল’ নামের একটি টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন যুগ এবং সভ্যতার প্রাচীনত্বকে ধারক গাজাকে একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের শহর হিসেবে আখ্যা দেন। একই সঙ্গে সেখানে সক্রিয়ভাবে আরো আবিষ্কার খোঁজার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
একই সঙ্গে তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি ভূমি, সমুদ্র এবং বিমান অবরোধের অধীনে রয়েছে ফিলিস্তিন। এর ফলে আর্থিক সংস্থানের অভাবের কারণে এই ছিটমহলের অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতেও খনন কাজ চালিয়ে যাওয়ার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
ফাদেল আল ওটলের মতে, “এই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ঐতিহাসিক শিকড় এবং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের প্রমাণ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে, যা হাজার হাজার বছর ধরে বিস্তৃত। এগুলো নিঃসন্দেহে দখলদার ইসরায়েল কর্তৃক প্রচারিত- ফিলিস্তিনকে জনবিহীন ভূমি চিত্রিত করার বর্ণনাকে খণ্ডন করে। ”
তিনি আরো বলেন, “এশীয় ও আফ্রিকা মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই গাজা উপত্যকা কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক গুরুত্বের ধারক।” সূত্র: আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর
বিডি প্রতিদিন/আজাদ