কয়েক সপ্তাহের গণবিক্ষোভ ও সামরিক বিদ্রোহের মুখে আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। যদিও তিনি নিজে জানিয়েছেন, জীবননাশের শঙ্কার কারণে তিনি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। একই সাথে তিনি অবৈধ ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
সোমবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় ৫১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রজোয়েলিনা তার অবস্থান প্রকাশ না করেই বলেন, সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের একটি দল আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। নিজের জীবন বাঁচাতে আমি নিরাপদ স্থান খুঁজতে বাধ্য হয়েছি। তবে তিনি পদত্যাগের কোনো ঘোষণা দেননি।
গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটিতে ‘জেন জি মাদা’ নামে পরিচিত তরুণ বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ চলছে। প্রথমে পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি নিয়ে এই প্রতিবাদ শুরু হলেও পরে এটি দুর্নীতি, উচ্চ বেকারত্ব এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মতো ব্যাপক অসন্তোষে রূপ নেয়।
বিক্ষোভ থামাতে রজোয়েলিনা তার পুরো মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলেও, বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগ দাবিতে অনড় থাকে।
পরিস্থিতি চূড়ান্ত মোড় নেয় গত শনিবার, যখন সামরিক বাহিনীর একটি এলিট ইউনিট ক্যাপস্যাট বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেয় এবং প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানায়। এই ইউনিটটি ২০০৯ সালে রজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করেছিল। ক্যাপস্যাট নিজেদেরকে সমস্ত সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ঘোষণা করে এবং একজন নতুন সেনাপ্রধানও নিয়োগ করেছে।
মাদাগাস্কারের বৃহত্তম বিরোধী দল টিআইএম পার্টির এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, বর্তমানে কার্যত সেনাবাহিনীই দেশ চালাচ্ছে। বিরোধী দল রজোয়েলিনার বিরুদ্ধে পদত্যাগজনিত অনুপস্থিতির কারণে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
অন্যদিকে, নতুন নিযুক্ত সেনাপ্রধান, জেনারেল ডেমোস্থিন পিকুলাস জনসাধারণের উদ্দেশ্যে নিশ্চিত করেছেন যে নিরাপত্তা বাহিনী দেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।
প্রেসিডেন্ট রজোয়েলিনা একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়েছেন বলে নিশ্চিত না করলেও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, মাদাগাস্কারে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। তিনি তরুণদের অভিযোগকে স্বাগত জানালেও কোনো সামরিক দল বা বিদেশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টার নিন্দা করেছেন। আফ্রিকান ইউনিয়নও অসাংবিধানিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
রজোয়েলিনার ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বেশ কয়েকজন, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান এনসেসহ অন্যান্যরা, ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ মরিশাসে পালিয়ে গেছেন।
জাতিসংঘের মতে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। যদিও সরকার এই হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে।
মাদাগাস্কারের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনে চলার আহ্বান নাকি সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা সংহতকরণ? সেদিকে নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল