ইরানে দুই বছর আগে শুরু হওয়া মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ এখনো তীব্রভাবে আলোচনায় রয়েছে। সেই সময়ের আন্দোলন থেকে আশা ছিল, ইরানের চার দশকের পুরোনো শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের সূচনা হবে। মাসা আমিনির মৃত্যু কেবল ইরানের নারীদের নয়, বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যু ইরানের বিক্ষোভের মূল উৎস হয়ে দাঁড়ায়। হিজাব আইন ভাঙার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়, আর পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়ই তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার দুই বছর পার হলেও ইরান থেকে নির্বাসিত এবং দেশটির অভ্যন্তরে থাকা মানুষজন এখনো বিশ্বাস করেন যে, মাসা আমিনির মৃত্যুর মাধ্যমে যে বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ জ্বলেছিল, তা ইরানের শাসনব্যবস্থার চেহারা বদলে দিয়েছে।
মাসার মৃত্যুর পরে ইরানের নারীরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এবং তাদের সেই বিক্ষোভ কেবল হিজাব আইনের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তা ধীরে ধীরে ইরানের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তম্ভগুলোকে নাড়িয়ে দেয়। ইরানের ক্ষমতাসীন নেতারা চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, এবং সেই আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর অ্যাসল্ট রাইফেল এবং শটগানের মতো ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভ দমন করে।
বিক্ষোভের সময়ে ৫৫১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, এবং হাজারো মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। সেই গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১০ জনের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক ডায়ানা এলতাহাওয়ি বলেন, ইরানে এখনো লক্ষাধিক মানুষ এই দমনপীড়নের ভুক্তভোগী হয়ে আছেন।
ইরানের কর্তৃপক্ষ এখন প্রতিশোধমূলকভাবে হিজাব আইনকে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে। যেখানে বিক্ষোভের মূল দাবিগুলোর মধ্যে ছিল হিজাব বাধ্যতামূলক না করা, সেখানে এখন হিজাব আইন বাস্তবায়নে নুর নামে একটি নতুন পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়েছে। এর আওতায় আরও কঠোরভাবে টহল চালানো হচ্ছে এবং নারীদের গাড়িও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
অধিকার সংস্থাগুলো বলছে, নারীদের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার মতো চরমপন্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। নারী অধিকার সংরক্ষণের আন্দোলনে লড়াই করা অনেকের মতে, ইরান নারীদের ওপর নিপীড়ন বাড়িয়েছে এবং তাদের যানবাহনও এখন আর নিরাপদ নয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইরানে নারীদের ওপর সহিংসতা এবং নিপীড়নের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইরানের বাইরে থাকা বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্দোলন দমনের পরে ইরান আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হলেও, সমাজের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বদলে গেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল