পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে পাত্তা না দিয়ে ইরান আবারও সামরিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দিচ্ছে। সাম্প্রতিককালে আত্মঘাতী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে দক্ষতা দেখানোর পর এবার ইরান মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে নতুন এক সফলতা অর্জন করেছে। এ ঘটনাটি বিশেষ করে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে পশ্চিমাদের জন্যও এটি একটি নতুন উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
ইরানি গণমাধ্যম জানায়, শনিবার দেশটির ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর নির্মিত একটি রকেট ব্যবহার করে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এ স্যাটেলাইটটি ইরানের মহাকাশ গবেষণার দ্বিতীয় সফল প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইরানের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, স্যাটেলাইটটি নির্ধারিত কক্ষপথে সফলভাবে পৌঁছেছে এবং এখন এটি তার নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করছে।
বিশ্ব গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, তেহরানের প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বের শহর শাহরুদের উপকণ্ঠ থেকে বিপ্লবী গার্ডের ঘাঁটি থেকে এই উৎক্ষেপণ পরিচালিত হয়। স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটটির নাম ‘কায়েম-১০০’, যা পূর্বে জানুয়ারিতেও একই নামের রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল। স্যাটেলাইটটি 'চামরান-১', যার ওজন ৬০ কিলোগ্রাম এবং এটি ৫৫০ কিলোমিটার কক্ষপথ অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছেছে।
এই উৎক্ষেপণ ইরানের সামরিক সক্ষমতার নতুন উদাহরণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে যখন রকেটটিতে কোরআনের একটি আয়াত খোদাই করা ছিল। এটি ইরানের প্রতিরক্ষা এবং আধ্যাত্মিক শক্তির এক প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, মহাকাশ গবেষণার জন্য উন্নত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যাটেলাইটটি তৈরি করা হয়েছে। বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এই সাফল্যের প্রশংসা করে জানান, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের বিজ্ঞানীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এমন একটি সময় হলো, যখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। এর কয়েক মাস আগেই ইরান ইসরায়েলের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। একইসঙ্গে তেহরান তার পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পশ্চিমা বিশ্বকে নতুন করে উদ্বিগ্ন করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও ইরানের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, উল্লেখ করে যে এটি ইরানের দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়নের পথে আরেক ধাপ।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল