যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ, ইউক্রেন এখন কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। বুধবার উত্তর ক্যারোলিনায় এক সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বক্তব্যে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন।
ট্রাম্পের মতে, ইউক্রেনের উচিত ছিল ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের আগে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে সমঝোতায় আসা। তিনি বলেন, যদি সবচেয়ে খারাপ চুক্তিও করতো, সেটি বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে অনেক ভালো হতো। তিনি আরও বলেন, তার প্রেসিডেন্সির সময় রাশিয়া কখনো আক্রমণ করত না এবং যদি তিনি পুনরায় হোয়াইট হাউসে আসেন, এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।
ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প বলেন, দেশটি ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সেখানে আর যুদ্ধের জন্য কোনো সক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে কিয়েভের বাইরের এলাকায় সৈন্য সংকট এবং বিপুল প্রাণহানির কারণে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প মন্তব্য করেন, এখন কোনো চুক্তি করা সম্ভব নয়, কারণ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বাইডেন প্রশাসনকে কড়া সমালোচনা করে আসছেন। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনকে ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস এই যুদ্ধকে আরও উসকে দিয়েছেন। ‘বাইডেন আর কমলাই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন,’ বলেন ট্রাম্প, ‘তারা জেলেনস্কিকে এত টাকা ও অস্ত্র দিয়েছেন যা আগে কোনো দেশ পায়নি।’
যদিও ট্রাম্পের এসব মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার অবস্থান নিয়ে। তিনি কখনো বলেননি, তিনি ইউক্রেনকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান কিনা। বরং, তার দৃষ্টিতে, যেকোনো সমঝোতা যুদ্ধের চেয়ে ভালো হতে পারত। তবে তিনি একাধিকবার উল্লেখ করেন পুতিন ‘দেবদূত নন। তার সময়ে পুতিন কখনও আক্রমণের সাহস পেতেন না বলেও তিনি দাবি করে থাকেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের রানিং মেট জে.ডি. ভ্যান্স অত্যন্ত চরমপন্থী। কারণ তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প আসলে জানেন না কীভাবে এই যুদ্ধ থামানো যায়, যদিও তিনি মনে করেন তিনি জানেন।’
জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে ‘যুদ্ধ জয় করার পরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পশ্চিমা দূর-পাল্লার অস্ত্রের আবেদনও করতে পারেন। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইতিমধ্যেই দেশটির এক-পঞ্চমাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
ট্রাম্পের এসব মন্তব্য ভবিষ্যতে তার প্রেসিডেন্সির জন্য কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল