বিজয়ের একদিন পর অর্থাৎ ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার এনবিসি টিভি-কে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করার অঙ্গীকারটি হবে আমার অগ্রাধিকারের প্রথম পদক্ষেপ। এটা করতে হবে গণরায়ের তাগিদে। এর কোন বিকল্প নেই। এ জাতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতেই এটা করতে হবে। কারণ অনেক খুনি এবং মাদক-ব্যবসায়ী ঢুকে পড়েছে। এখনও সময় হচ্ছে নিজ নিজ দেশে ফেরার।
আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই ট্রাম্প তার অগ্রাধিকারের তালিকার বাস্তবায়ন ঘটাবেন। নির্বাচনী অঙ্গীকারের শতভাগ বাস্তবায়ন ঘটাতে ইতোমধ্যেই তিনি চিফ অব স্টাফ হিসেবে সুসি উইলসকে বেছে নিয়েছেন। ৬৭ বছর বয়সী সুসি হবেন হোয়াইট হাউসের প্রথম নারী চিফ অব স্টাফ।
এক কোটিরও অধিক অবৈধ অভিবাসী তাড়াতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে, লোকবলও বাড়াতে হবে। কোত্থেকে আসবে এ অর্থ-এমন প্রশ্নের জবাবে রিপালিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, অর্থ কোনো সমস্যা নয়। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এটা করতে হবে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী ট্রাম্পের এই বহিষ্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্নে অর্থাৎ ১১ মিলিয়ন থেকে ১৪ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের পর নিজ নিজ দেশে ফেরৎ পাঠাতে কমপক্ষে ৩১৫ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। এর বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট গভর্নরগণের আপত্তির পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে আপিলের হুমকি।
স্মরণকালের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ট্রাম্প বারবার অবৈধ অভিবাসীর সমস্যাকে প্রকট করার জন্যে দায়ী করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রশাসনকে। বলেছেন যে, ট্যাক্স প্রদানকারী কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকানদের নাজুক অবস্থার পরিবর্তন তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ সুগম করার পরিবর্তে দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে বাইডেন-কমলা প্রতিদিন হাজারো বিদেশিকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমার আমলে শুরু হওয়া সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রকল্পটি বন্ধ করে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে এখোন পুরো প্রশাসনকে নিযুক্ত করতে চান এমন একটি ভয়ংকর সামাজিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানে। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে আগতদেরকে ফাইভ স্টার হোটেলে রাখা হয়েছে। তাদেরকে খাবারের অর্থ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে আমেরিকার অর্থনৈতিক সমস্যাকে প্রকট করা হয়েছে।
রিপাবলিকান শিবিরের অভিযোগ অনুযায়ী ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে গত জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ২২ লাখ বিদেশি জোরপূর্বক ঢুকে পড়েছে আমেরিকায়। যার প্রায় সকলেই সেন্ট্রাল আমেরিকার নাগরিক। এরা সমাজকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এদের আমেরিকায় থাকার অনুমতি দেয়া হবে না জননিরাপত্তার স্বার্থে। প্রসঙ্গত, তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে আরো প্রায় সোয়া কোটি বিদেশি রয়েছেন যারা গ্রিনকার্ড পাননি। তার মধ্যে অনেকেই বছরের পর ট্যাক্স প্রদান করছেন। স্বামী/স্ত্রী-সন্তান রয়েছেন গ্রিনকার্ডধারী অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন। আবার কম পক্ষে ৮ লাখ রয়েছেন যারা শিশুকালে মা-বাবার হাত ধরে আসার পর আমেরিকার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন। এরা যুক্তরাষ্ট্রকেই নিজ দেশে পরিণত করলেও অভিবাসনের মর্যাদা পাননি। এমন সোয়া কোটি অভিবাসীকে গ্রিনকার্ডের পথ বেয়ে সিটিজেনশিপ প্রদানের অঙ্গীকার ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-জো বাইডেন করেছিলেন কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটেনি। অধিকন্তু বাইডেন-কমলার আমলে সমস্যাকে আরো গভীর করা হয়েছে নতুন করে লোকজনকে ঢুকতে দিয়ে। অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশিও আছেন। ট্রাম্পের এই হুংকারে সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত্র।
ট্রাম্পের অগ্রাধিকার তালিকায় আরো রয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি শান্ত করা, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো, কর ও শুল্ক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অধিকাংশ বিদেশি পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। জলবায়ু নীতি তথা পরিবেশ সংক্রান্ত আইন শিথিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষত, আমেরিকার গাড়ি শিল্পকে সহায়তা করতে তিনি এ উদ্যোগ নিতে পারেন। বাইডেন সরকার পরিবেশবান্ধব গাড়ি শিল্পের বিষয়ে যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল, তা বাতিল করার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আর্কটিক অঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে তেল উত্তোলনের অনুমতি দিতে চান। তার মতে, এ বিষয়টি জ্বালানির দাম কমাতে সহায়ক হবে, যদিও বিশ্লেষকরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
গর্ভপাত ইস্যুতে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প তার মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। নারীদেহের নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলেছেন। ৬ জানুয়ারির কিছু দাঙ্গাকারীকে ক্ষমা করার অঙ্গীকারেরও বাস্তবায়ন ঘটাবেন স্বল্পতম সময়ে। বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করার তালিকাও রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল