মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা দু’দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জড়িয়ে পড়ে। ২ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের বড় বড় শহরে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর জবাবে ২৫ অক্টোবর ইসরায়েল ইরানের প্রায় ২০টি সামরিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালায়। তবে সর্বশেষ শুক্রবারের হামলাকে পরিস্থিতির ‘নাটকীয় অবনতি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা ও প্রস্তুতির প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিক থেকে দুই দেশেই রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য ও কিছু বিশেষত্ব।
‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ইসরায়েলের তুলনায় ইরান এক ধাপ পিছিয়ে আছে। তবে দুটি দেশই বিশ্বের সামরিক শক্তিধর ২০ শীর্ষ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিরক্ষা খাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশই প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তবে বার্ষিক সামরিক বাজেটে ইরানের ব্যয় ৯৯৫ কোটি ডলার (১৬তম অবস্থানে), যেখানে ইসরায়েলের ব্যয় ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার (১৫তম অবস্থানে) অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশি। পাশাপাশি সেনাসংখ্যার হিসেবে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান।
যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার : ইসরায়েলের সামরিক বিমানের সংখ্যা ৬১২। অন্যদিকে ইরানের আছে ৫৫১টি। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান আছে ২৪১টি, যেখানে ইরানের আছে ১৮৬টি। অ্যাটাকিং বিমান ইসরায়েলের ৩৯টি এবং ইরানের ২৩টি। পরিবহন বিমানে ইরান এগিয়ে (৮৬টি বনাম ১২টি), তবে প্রশিক্ষণ বিমানে ইসরায়েল (১৫৫টি) এগিয়ে (ইরানের ১০২টি)। হেলিকপ্টারের দিক থেকে ইসরায়েল (১৪৬টি) এগিয়ে, ইরানের আছে ১২৯টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যায় ইসরায়েল (৪৮টি) বেশ শক্তিশালী, যেখানে ইরানের আছে ১৩টি।
ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান : ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানের দিক থেকে ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে। ইরানের ট্যাংক রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬টি, যেখানে ইসরায়েলের আছে ১ হাজার ৩৭০টি। সাঁজোয়া যানের সংখ্যায় ইরান (৬৫ হাজার ৭৬৫টি) ইসরায়েলের (৪৩ হাজার ৪০৩টি) চেয়ে অনেক বেশি।
আর্টিলারি সক্ষমতায়ও ইরান এগিয়ে। তাদের রকেট আর্টিলারি এমএলআরএসের সংখ্যা ৭৭৫ এবং সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারির সংখ্যা ৫৮০। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সেল্ফ প্রপেল্ড আর্টিলারি আছে ৬৫০টি ও এমএলআরএস বা রকেট আর্টিলারি ১৫০টি।
নৌশক্তি : নৌবাহিনীর শক্তির দিক থেকেও ইরান এগিয়ে। দেশটির ১০১টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে সাতটি ফ্রিগেট এবং ২১টি টহল জাহাজ। অন্যদিকে ইসরায়েলের যুদ্ধজাহাজ ৬৭টি, যার মধ্যে ৪৫টি টহল জাহাজ ও কোনো ফ্রিগেট নেই। সাবমেরিনের দিক থেকেও ইরান (১৯টি) ইসরায়েলের (৫টি) চেয়ে শক্তিশালী।
পারমাণবিক শক্তি : স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআই-পিআরআই) তথ্যানুযায়ী, গত বছরের শুরুতে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। এ দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েল থাকলেও, ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই ছিল না। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারবার দাবি করেছে, ইরান ইউরেনিয়ামের মজুদ দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার তাদের রিপোর্টে পারমাণবিক অস্ত্র ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি।
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/শআ