গাজা ভূখণ্ডে চলমান যুদ্ধের মধ্যে জাতিসংঘের সরবরাহ করা ত্রাণ ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা লুট করেছে বলে এমন কোনও প্রমাণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে নেই বলে স্বীকার করেছেন দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।
যদিও ইসরায়েল ইতোপূর্বে দাবি করেছিল, হামাস ত্রাণ লুট করে তা তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য ব্যবহার করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এ তথ্য জানিয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
হারেৎজের প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আরও দুই সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে- গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করেছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।
তাদের এই বক্তব্য মূলত ইসরায়েলি সরকারের পূর্ববর্তী দাবির সরাসরি বিরোধিতা করেছে। নেতানিয়াহু সরকার বলেছিল, হামাস ত্রাণ সরবরাহ দখল করে তা তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য ব্যবহার করছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে গাজায় ত্রাণ সরবরাহে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল ইসরায়েল।
তবে এই স্বীকারোক্তি এসেছে এমন এক সময়, যখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত ত্রাণ ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ত্রাণ সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডকে গাজার সাধারণ মানুষের ওপর সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করছে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা।
গত শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও হামাসের ত্রাণ চুরি করার কোনও প্রমাণ খুঁজে পায়নি। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এমন অভিযোগকে ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থা ‘গাজা রিলিফ ফাউন্ডেশন’কে সমর্থন জানিয়েছিল, যেটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত নয়।
গত ২৭ মে থেকে ইসরায়েল ‘গাজা রিলিফ ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে নিজস্বভাবে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
এদিকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, যার ফলে শত শত সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রচণ্ড অপুষ্টিতে কঙ্কালসার মানুষজন ক্লান্তি, পানিশূন্যতা ও দীর্ঘদিনের অনাহারে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছেন।
শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে দুই শিশুসহ আরও পাঁচ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এ নিয়ে গত অক্টোবর থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১২৭ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজার প্রতি তিনজনের একজন কয়েক দিন ধরে একেবারেই খাবার পাচ্ছে না, যা ইসরায়েলের চলমান অবরোধেরই পরিণতি। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
বিডি প্রতিদিন/একেএ