চীন সরকার তাদের দেশের তিন বছরের কম বয়সী প্রতিটি শিশুর জন্য বছরে ৩,৬০০ ইউয়ান (প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার বা ৪০ হাজার টাকা) নগদ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই কেন্দ্রীয় ভাতার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের জন্মহার হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই ভাতা প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ মিলিয়ন পরিবারকে সহায়তা করবে। প্রতিটি শিশুর জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮০০ ইউয়ান পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে, যা তিন বছরের জন্য দেওয়া হবে।
গত কয়েক বছর ধরে চীনে জন্মহার দ্রুত কমছে। এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি এখন জনসংখ্যা সংকটের মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৯.৫৪ মিলিয়ন শিশু। যদিও সংখ্যাটি ২০২৩ সালের চেয়ে কিছুটা বেশি, কিন্তু এটি এখনো অত্যন্ত কম এবং যথেষ্ট নয় ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও শ্রমশক্তি ধরে রাখার জন্য।
চীনের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১.৪ বিলিয়ন হলেও বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে চীনকে একটি কঠিন বাস্তবতায় পড়তে হচ্ছে যেখানে কাজের উপযুক্ত বয়সী মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
এর আগে চীনের কিছু প্রদেশ ও শহরে স্থানীয়ভাবে জন্ম-বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যেমন- দেশটির উত্তরাঞ্চলের হোহহোট শহরে তৃতীয় সন্তানের জন্য দম্পতিদের এককালীন ১ লাখ ইউয়ান পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হয়। শেনইয়াং শহরে তৃতীয় শিশুর জন্য মাসে ৫০০ ইউয়ান করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
তবে এবারই প্রথম চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পুরো দেশব্যাপী শিশু ভাতা চালু করা হলো। এই ভাতা ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে চালু হলেও ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুরাও আংশিক সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবে।
চীনে এখন সন্তান লালনপালনের খরচ অত্যন্ত বেশি। একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালনে গড়ে ৭৫,৭০০ ডলার (প্রায় ৮৩ লাখ টাকা) খরচ হয়- যা বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল হিসেবেই ধরা হয়। এই ব্যয় ও কর্মজীবী মায়েদের ওপর চাপের কারণেই চীনের অনেক পরিবার সন্তান নিতে বা দ্বিতীয়-তৃতীয় সন্তান নিতে আগ্রহী নয়। চীন সরকার চায়, এই ভাতা শিশু পালন খরচের কিছুটা চাপ কমাবে এবং মানুষকে পরিবার বড় করতে উৎসাহিত করবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে- এই ধরনের ভাতা ভালো উদ্যোগ হলেও এটি যথেষ্ট নয়। শুধু নগদ সহায়তা দিয়ে পরিবারগুলোকে সন্তানের জন্য রাজি করানো কঠিন। এর পাশাপাশি দরকার- বিনামূল্যে বা সস্তায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, মায়েদের চাকরির নিশ্চয়তা ও ছুটি, স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, আবাসন ব্যয় কমানো। চীনা সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ফ্রি প্রিস্কুল শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্যও পরিকল্পনা করছে।
তথ্য সূত্র- বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ