কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো হামলার পর ইসরায়েল আরও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা বিশ্বের কোথাও নিরাপদ নয়। এই হামলা মার্কিন মিত্র কাতারে হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার এক্স-এ লিখেছেন, ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় আঘাত হানবে। তাদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই। তিনি আরও বলেন, (২০২৩ সালের) ৭ অক্টোবর হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের প্রত্যেককে সম্পূর্ণ জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
হামাস জানিয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বরের এই হামলায় তাদের ছয়জন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের জ্যেষ্ঠ নেতারা এই হামলা থেকে বেঁচে গেছেন। গোষ্ঠীটি বলেছে, আমাদের আলোচক দলের ভাইদের হত্যা করার জন্য শত্রুর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই সামরিক পদক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্প একমত নন। এমনকি তারা কাতারে হামলার বিষয়ে আগাম সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল। কিন্তু দোহা জানায়, হামলার আগেই তারা এই সতর্কতা পায়নি।
ইসরায়েলের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এই পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণ করে এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করি না। তিনি আরও বলেন, এটি কাতারের ওপর হামলা নয় এটি হামাসের ওপর হামলা।
এই হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক মহল থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান বলেছেন, শুধু একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের একটি "বিস্তৃত, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই সমাধান সম্ভব। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্বের গুরতর লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
রাশিয়া এবং চীনও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মস্কো বলেছে, এই অভিযান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে, হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, হামলার সময় হামাসের শীর্ষ ছয়জন নেতা লক্ষ্যবস্তু ভবনে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় তাদের হামলা জোরদার করেছে। তারা গাজা সিটিতে আরেকটি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে। সামরিক বাহিনীর দাবি, ভবনটি হামাস ব্যবহার করছিল। এই হামলার ফলে ওই এলাকায় ঘন কালো ধোঁয়া দেখা যায় এবং ভবনটি মাটিতে ধসে পড়ে।
গাজা যুদ্ধের ফলে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। জাতিসংঘ গত আগস্টে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেয়েন এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরায়েলের চরমপন্থী মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গাজায় যা ঘটছে, তা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। খাবারের জন্য আকুতি করা মানুষরা মারা যাচ্ছে। মায়ের কোলে প্রাণহীন শিশুরা... এই দৃশ্যগুলো সত্যিই ভয়াবহ।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’র এর জবাবে বলেছেন, ইউরোপ ভুল বার্তা দিচ্ছে, যা হামাস এবং মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী অক্ষকে শক্তিশালী করবে।
হামাসের ওপর এই হামলার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, তাকে আগে থেকে জানানো হয়নি এবং তিনি পুরো পরিস্থিতি নিয়ে খুশি নন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, এটি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নেওয়া সিদ্ধান্ত, এটি আমার সিদ্ধান্ত নয়। তিনি আরও বলেন, আমি কাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের এক শক্তিশালী মিত্র ও বন্ধু হিসেবে দেখি এবং এই হামলার স্থান নিয়ে আমি খুবই দুঃখিত।
সূত্র: স্ট্রেইটস টাইমস
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল