অশান্ত নেপালে অনেক ভারতীয় আটকে পড়েছেন। তাদের ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু নেপালের সীমান্তের ঠিক ওপারে চিনেও আটকে আছেন অনেকে।
কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা সেরে ফিরতে গিয়ে আটকে পড়েছেন এই ভারতীয়রা। কীভাবে দেশে ফিরবেন, এখনও অনিশ্চিত। কারণ, নেপালের সীমান্ত মঙ্গলবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিকল্প পথ জানা নেই কারও!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে দাবি, কৈলাস-মানস সরোবারের অন্তত দুই হাজার পুণ্যার্থী চিনের তিব্বত প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম ড্রাচেনে আটকে রয়েছেন মঙ্গলবার থেকে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয়। ২০২০ সাল থেকে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। চিন এবং ভারত সরকারের মধ্যে আলোচনার সাপেক্ষে এ বছরই তা আবার চালু হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে যে এ ভাবে আটকে পড়তে হবে, কল্পনাও করতে পারেননি পুণ্যার্থীরা। এখন সাহায্যের জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে তারা তাকিয়ে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
মানস সরোবর যাত্রা শুরু হওয়ার পর ভারত সরকারি উদ্যোগে এ বছর ৭৫০ জন পুণ্যার্থীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকার মূলত দু’টি রুট অনুসরণ করে থাকে। প্রথমটি সিকিম হয়ে এবং দ্বিতীয়টি উত্তরাখণ্ড হয়ে। এর বাইরে অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে মানস সরোবরে যান। তাদের ক্ষেত্রে নেপাল হয়ে একটি রুট ব্যবহার করা হয়। এই রুটেই এ বার সমস্যা হচ্ছে। এক ভুক্তভোগীর জানান, তিব্বতের এই ড্রাচেন গ্রামে খুব বেশি মানুষের থাকার বন্দোবস্ত নেই। আমরা যারা কৈলাসের পরিক্রমা সেরে ফিরি, তাদের কিছু না কিছু শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। একটু ধাতস্থ হতে সাময়িক ভাবে ড্রাচেনে পাঠানো হয় পুণ্যার্থীদের। এখানে হোটেলগুলিতে অক্সিজেন রয়েছে। আমরা তেমন ভাবেই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখন আর ফিরতে পারছি না। এ দিকে পুণ্যার্থীদের ভিড় বাড়ছে। স্থানীয় চিনারা আমাদের অন্য গ্রামে পাঠিয়ে দিতে চাইছেন। ড্রাচেনে আর থাকতে দিচ্ছেন না। কী হবে বুঝতে পারছি না।
নেপালের সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই জটিলতার সূত্রপাত। তিব্বতের কৈলাস পাহাড়ের বুকে ড্রাচেন গ্রামের উচ্চতা প্রায় ছয় হাজার মিটার। সেখানে আটকে পড়া ভারতীয়দের সমস্যা নিয়ে বেইজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি। আর এক ভুক্তভোগীর কথায়, সকলে তো নেপালে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে কথা বলছেন। আমরা এখানে প্রায় দুই হাজার জন রয়েছি। অনেকেই বয়স্ক, অসুস্থ। কৈলাস পরিক্রমা সেরে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় এখানে পুণ্যার্থীরা আসছেন। ভিড় বাড়ছে। ভারত সরকার সাহায্য না করলে আমরা এখান থেকে বেরোতে পারব না।
গণবিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে কেপি শর্মা ওলি মঙ্গলবার ইস্তফা দিয়েছেন। বহু নেতামন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়েছে মন্ত্রীদের। এখনও অশান্তি থামেনি। অলির পদত্যাগের পর নেপালের ক্ষমতা এখন সেনার হাতে। তারা রাতে কারফিউ জারি করেছে গোটা দেশে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল