শ্রীলঙ্কার উচ্চ আদালত এক ঐতিহাসিক বন্যপ্রাণী পাচারের মামলায় শুক্রবার ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাতি রক্ষক নিরাজ রোশনের। আদালত তাঁকে দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে—চুরি করা একটি হাতিশাবক রাখার অপরাধ এবং সেটি বৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ভুয়া নথি তৈরি করা।
রায় অনুযায়ী, রোশনকে ৬৮,৬০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৪ লাখ টাকা) জরিমানা দিতে হবে এবং হাতিশাবকটি রাষ্ট্রের জিম্মায় যাবে। ছয় বছর ধরে বিচার প্রক্রিয়া চলার পর এই রায় এসেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, “শ্রীলঙ্কায় এটি প্রথম হাতি পাচারের মামলা। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন।” প্রমাণের অভাবে আরও সাতজন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক দশকে প্রায় ৪০টি হাতিশাবক চুরি হয়েছিল, যেগুলোর বাজারমূল্য প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার ডলার। ২০১৫ সালে নতুন সরকারের অভিযান এই প্রক্রিয়া অনেকটাই বন্ধ করে দেয়, তবে ২০১৯ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বেশ কয়েকটি মামলা খারিজ করে দেন। রোশনের মামলাটি চলতে থাকে।
রোশনের বড় ভাইয়ের শাসনামলে ২০০৫–২০১৫ সালের মধ্যে তিনি নিজের সরকারি বাসভবনে দুটি হাতিশাবক পুষেছিলেন। শ্রীলঙ্কার ধনী অভিজাতদের মধ্যে হাতিশাবক রাখা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। ঐতিহ্যগতভাবে অভিজাত শ্রেণিই এগুলো রাখত এবং এখনো মন্দির উৎসবে হাতি শোভাযাত্রায় ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু অবৈধভাবে হাতিশাবক চুরি ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহারের ফলে দেশটির হাতির সংখ্যা কমে গেছে। সংরক্ষণবাদীরা জানাচ্ছেন, হাতিশাবক ধরার সময় প্রায়ই মা হাতিকে হত্যা করা হয়। গত পাঁচ বছরে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ হাতি এবং ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় প্রায় সাত হাজার বন্য হাতি রয়েছে, যাদের জাতীয় সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
সোর্স: এএফপি
বিডি প্রতিদিন/আশিক