মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে ফের সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

বিজেপি নেতাদের বাংলা ভাগের দাবির বিরোধিতায় সরব হয়েছে তৃণমূল

কলকাতা প্রতিনিধি

কয়েক দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত উত্তরবঙ্গ- এ দাবি তুলেই আলিপুরদুয়ারা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা সোচ্চার। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও এ দাবি জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বার্লা। বিজেপি সাংসদের এ দাবিতেই এখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। বার্লার ওই দাবির পরই তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে। কোনোভাবেই বাংলা ভাগ করতে দেওয়া হবে না বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। ইতিমধ্যে জন বার্লার বিরুদ্ধে কোচবিহারে এফআইআর দায়ের করেছেন তৃণমূলেরই এক নেতা।

তবে বার্লার এ দাবি ঘিরে বিজেপির অন্দরেও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এ দাবির বিরোধিতা করে দলটির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, বিজেপি এ ধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।

দলের রাজ্য কমিটিতে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও। বাংলা ভাগের চিন্তা যে দল কোনোভাবেই সমর্থন করে না সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও। আর এর পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দলের রাজ্য সভাপতি ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা যেখানে এ ধরনের কোনো বিষয়কে মান্যতা দিচ্ছেন না সেখানে একজন সাংসদ কীভাবে এ দাবি তুলতে পারেন?

এখানেই শেষ নয়, জন বার্লার ওই দাবির পরই বাংলা ভাগের দাবিতে সরব হলেন দলেরই আরেক সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। রাঢ়বঙ্গকে (বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম) নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি এই সাংসদ। গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাই পশ্চিমবঙ্গকে ভেঙে তিনি আলাদা বাংলাদেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। তবে আমরাও রাঢ়বঙ্গকে নিয়ে আলাদা রাজ্য গঠনের দাবি জানাব।’ তার অভিযোগ, রাঢ়বঙ্গও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। এখানকার কোনো যুবকের চাকরি হয় না। নেই কোনো উন্নয়ন। তার মন্তব্য, ‘মমতার রাজত্বে উন্নয়ন সম্ভবও নয়, তাই জঙ্গলমহলের মানুষের কথা ভেবেই আমি আলাদা রাজ্যের দাবি জানাচ্ছি।’

জন বার্লার বাংলা ভাগের বিতর্ক থেকে যখন রাজ্য নেতৃত্ব দূরত্ব বাড়াচ্ছে, ঠিক তখনই সৌমিত্রের এ দাবি যথেষ্ট অস্বস্তি বাড়িয়েছে দিলীপ ঘোষ-শুভেন্দু অধিকারীদের। দলের ভিতর যেভাবে বাংলা ভাগের আওয়াজ উঠছে তা দিলীপ ঘোষরা কীভাবে সামাল দেন সেদিকেই চোখ সবার।

ইতিমধ্যে বিজেপি নেতাদের বাংলা ভাগের দাবির বিরোধিতায় সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের বিধায়ক তাপস রায় জানান, ‘বিজেপি নেতারা বাংলার ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি জানেন না; তারা ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস জানেন না। বাংলা সম্পর্কে তারা মনে মনে যে ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।’

এদিকে আলিপুরদুয়ারার সাংসদ জন বার্লার উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য ঘোষণা করা প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ ও দলটির রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন ‘এ বাংলাকে ভাগ করার চেষ্টা আগেও হয়েছে। কখনো গোর্খাল্যান্ডের নামে, কখনো কামতাপুরি, আবার কখনো গ্রেটার কামতাপুরির নামে। আসলে উত্তরবঙ্গে এ রকম রাজনীতি বরাবর চলে। পরিকল্পিতভাবে একটা রাজনৈতিক তাস খেলা হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে বাংলার পক্ষে বিপদ ডেকে আনতে পারে।’

গতকাল বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অধীরের আরও দাবি, ‘বাংলার পরাজয় বিজেপি হজম করতে পারছে না। তাই নতুন নতুন তত্ত্ব তৈরি করে সংকীর্ণ, অশান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এগুলো বিজেপির সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ। কোনো দিন তারা কলকাতাকে ইউনিয়ন টেরিটরি করার কথা ঘোষণা করবে। জম্মু-কাশ্মীরকে করেছে। কলকাতাকেও পারবে।’

সর্বশেষ খবর