বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনিদের ভয়ে আত্মগোপনে আফগান নারী বিচারকরা

আফগানিস্তানে তারা ছিলেন নারী অধিকারের অগ্রদূত। দেশের সবচেয়ে কোণঠাসা মানুষদের জন্য ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করতে তারা ছিলেন আইনের সুদৃঢ় রক্ষক। কিন্তু যে খুনি-অপরাধীদের তারা সাজা দিয়েছিলেন, আজ তাদের হাত থেকেই বাঁচতে আত্মগোপন করে আছেন ২২০ জনেরও বেশি আফগান নারী বিচারক। আফগানিস্তান গত ১৫ আগস্ট তালেবানের দখলে চলে যাওয়া এবং নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর কারাবন্দী বহু তালেবানই মুক্তি পেয়েছে। তারা এখন খুঁজে ফিরছে সেই নারী বিচারকদের। তাই প্রতিশোধ হামলার শিকার হওয়ার ভয়ে আছেন এই বিচারকরা। আফগানিস্তানজুড়ে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা সাবেক ছয় নারী বিচারক কথা বলেছেন বিবিসি’র সঙ্গে। নিরাপত্তার কারণে তাদের কারও আসল নাম জানায়নি বিবিসি। মাসুমা বিচারক হিসেবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে শত শত অপরাধীকে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু তালেবান তার শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কয়েক দিন পরই জেল থেকে মুক্তি পায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া হাজার হাজার অপরাধী। এরপর থেকেই প্রাণনাশের হুমকি পেতে শুরু করেন মাসুমাসহ অন্যরা।

 তার ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে টেক্সট মেসেজ, ভয়েস কলও পাঠানো হয়। মাসুমা বলেন, একদিন মধ্যরাতে তিনি জানতে পারেন তালেবান সব কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। তখুনি তিনি পালিয়ে যান- বাড়িঘর, সম্পত্তি সব পেছনে ফেলে। আর পালানোর পরপরই অপরাধীরা তার বাড়িতে হানা দেয়। পরে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে সেকথা জানতে পেরেছিলেন তিনি। আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে ২৭০ জন নারী বিচারকের আসনে বসেছেন। তাদের কেউ কেউ দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং বিশিষ্ট নারী হওয়ায় পরিচিত মুখ। সে কারণে তাদেরকে লুকিয়ে চলাফেরা করতে হয়।

বিবিসি তদন্ত করে দেখেছে যে, আফগানিস্তানজুড়ে অন্তত ২২০ জন সাবেক নারী বিচারক বর্তমানে লুকিয়ে আছেন। বিভিন্ন প্রদেশে লুকিয়ে থাকা সাবেক ৬ নারী বিচারকের সঙ্গে গত ৫ সপ্তাহে কথা বলে মোটামুটি একই চিত্র পেয়েছে বিবিসি। এই নারী বিচারকদের সবাই আগে সাজা দেওয়া তালেবান সদস্যদের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন। এই বিচারকদের চারজন আবার নির্দিষ্টভাবে স্ত্রী খুনের জন্য সাজা দেওয়া তালেবান সদস্যদের নামও বলতে পেরেছেন।

প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার কারণে নারী বিচারকরা অন্তত একবার হলেও তাদের ফোন নাম্বার বদলেছেন। আর এখন তারা অনবরত কয়েকদিন পরপর জায়গা বদল করে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছেন। তাদের ফেলে আসা বাড়িঘরে তালেবানের আনাগোনা এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের তালেবানের জেরার মুখে পড়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।

সর্বশেষ খবর