শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

গ্যাস ইউরোপে না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে রাশিয়া

গ্যাস ইউরোপে না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে রাশিয়া

ইউরোপে যে গ্যাসের দরকার হয় তার বেশির ভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। আর এ কারণে ইউরোপে হু হু করে বাড়ছে গ্যাসের দাম। কিন্তু উল্টো ঘটনা রাশিয়ায়। কারণ অকারণে রাশিয়া প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে। সরবরাহ না কমালে এসব গ্যাস ইউরোপে রপ্তানি হতো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া প্রতিদিন ১ কোটি ডলারের গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে রাইস্টাড অ্যানার্জির এক বিশ্লেষণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি রুশ গ্যাসক্ষেত্রে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পর্টোভায়া গ্যাসক্ষেত্রে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পোড়ানোর ফলে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হচ্ছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের নতুন এই স্থাপনাটি ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে, সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্যাস এর আগে নর্ডস্ট্রিম    ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে রাশিয়া    এই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। মস্কো বলছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে।

কিন্তু জার্মানি বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেওয়ার পর, রাজনৈতিক কারণেই মস্কো গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। জ্বালানি সংক্রান্ত একটি কোম্পানি রাইস্টাড অ্যানার্জি বলছে, পোর্তোভায়ার ওই এলএনজি স্থাপনায় প্রতিদিন ৪০ লাখ ঘনমিটারেরও বেশি গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। এ বছরের আরও কিছু আগের দিকে ফিনল্যান্ডের কিছু নাগরিক প্রথমে দেখতে পান যে, রাশিয়ার সীমান্তের ওপারে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তারা মনে করেন, সেখানে হয়তো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন যেখান থেকে শুরু হয়েছে, পোর্তোভায়ার এই স্থাপনাটি তার খুব কাছে। এই পাইপলাইন দিয়েই জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। জুন মাসের পর গবেষকরা দেখতে পান যে, ওই স্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসা তাপ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। ধারণা করা হয়, ওই স্থাপনায় প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে ফেলার কারণে সেখানে এই তাপ উৎপন্ন হচ্ছে।

তবে রাশিয়া বলছে, যেসব কেন্দ্রে গ্যাস পরিশোধন করা হয় সেখানে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত কারিগরি ও নিরাপত্তাজনিত কারণেই তা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই স্থাপনাটিতে যে পরিমাণে গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে তা বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে।

যুক্তরাস্ট্রের মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ ড. জেসিকা ম্যাকার্টি বলেন, ‘কোনো এলএনজি কারখানায় এত গ্যাস কখনো পুড়তে দেখিনি। জুন মাসের শুরুতে আমরা প্রচুর গ্যাস জ্বলতে দেখলাম। কিন্তু সেটা আর বন্ধ হলো না, বরং প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পুড়তেই থাকল।’

যুক্তরাজ্যে জার্মান রাষ্ট্রদূত মিগুয়েল বের্গার বলছেন, ইউরোপ গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে এবং তার প্রভাব পড়েছে রুশ অর্থনীতির ওপর। ‘তাদের কাছে আর কোনো দেশ নেই যাদের কাছে তারা এই গ্যাস বিক্রি করতে পারে। ফলে তাদেরকে এই গ্যাস পুড়িয়ে ফেলতে হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

জ্বলে ওঠা গ্যাস সামলাতে কাজ করে- এ রকম একটি কোম্পানি ক্যাপটেরিওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক ড্যাভিস বলেছেন, রাশিয়ার ওই স্থাপনায় যে গ্যাস জ্বলছে সেটা কোনো দুর্ঘটনার কারণে ঘটেনি। তিনি মনে করেন ইচ্ছাকৃতভাবেই এই গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর