রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অপরাধীদেরও যুদ্ধে পাঠাচ্ছেন পুতিন

অপরাধীদেরও যুদ্ধে পাঠাচ্ছেন পুতিন

দোষী সাব্যস্ত খুনি এবং মাদক পাচারকারীদের মতো জেল খাটা দাগি অপরাধীদেরও এবার ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এ জন্য আইন সংশোধন করেছেন তিনি। মারাত্মক সব অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সদ্য জেলখেটে বের হওয়া আসামিদের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পুতিন রিজার্ভ সেনা (আপৎকালীন মজুদ সেনা) তলব করার আইনে সংশোধনী এনেছেন।

তবে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নকারী কিংবা সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত সাবেক কারাবন্দীদের এর আওতায় রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানোর জন্য গত সেপ্টেম্বরে আংশিক রিজার্ভ সেনা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। প্রায় ৩ লাখ সেনাকে ডাকার নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এ নির্দেশের পর ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করা হাজার হাজার রুশ নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেপ্টেম্বরেই খবর বেরিয়েছিল যে, রাশিয়ার আধা সামরিক সংগঠন ওয়াগনার ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানোর জন্য কারাবন্দিদের দলে ভেড়াচ্ছে। যুদ্ধে যাওয়ার বিনিময়ে তাদের সাজা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, বিদেশে মোতায়েন সেনাদলের সঙ্গে কাজ করার বিনিময়ে কারাবন্দিদের সাজা কমানোর সুযোগ নেই। কিন্তু ওয়াগনারের প্রধান কর্মকর্তা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন কারাবন্দিদের উদ্দেশে এক বক্তব্যে বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করলে তাদের আর জেলে ফিরতে হবে না। শুক্রবার ওয়াগনার প্রথমবারের মতো রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে তার প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর খুলেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত তলব করা প্রায় ৩ লাখ সেনার মধ্যে ৪৯ হাজার মতো সেনাকে ইউক্রেন যুদ্ধে মোতায়েন করেছেন বলে ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন। তাছাড়া, ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীও যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুতিনের এই রিজার্ভ সেনা মোতায়েনকে রুশ সেনাদের ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যর্থ হওয়ার লক্ষণ হিসেবেই দেখে আসছেন পশ্চিমা দেশগুলোসহ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞরা। রুশ সেনারা ইউক্রেন যুদ্ধে অপরাধ করছে বলে অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের গঠন করা ইউক্রেন বিষয়ক স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসামরিক মানুষদের সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করাসহ বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধ করেছে রুশ বাহিনী।

এদিকে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত খেরসনের কাছাকাছি চলে আসছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এই নগরী পুনর্দখল করতে পারলে যুদ্ধে বিরাট জয় পাবে তারা। তবে রুশ বাহিনী সেখানে পাল্টা আক্রমণের মুখে বেকায়দায় থাকলেও সহসাই বিদায় নেবে বলে মনে করছে না ইউক্রেনীয় সেনারা। এ পরিস্থিতিতে খেরসনে তাদের জন্য ঘনিয়ে আসছে একটি প্রবল রক্তক্ষয়ী লড়াই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও এরই মধ্যে ইউক্রেনের দক্ষিণের এই খেরসন অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। খেরসনের দিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী ক্রমেই এগিয়ে যেতে থাকায় পুতিন বলেছেন, হামলা থেকে বাঁচতে বিপজ্জনক এলাকাগুলো থেকে মানুষজনের চলে যাওয়া উচিত। খেরসন থেকে এরই মধ্যে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ চলে গেছে। বিবিসি

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই অঞ্চলটি দখল করেছিল রাশিয়া। পরে তারা নিজ ভূখন্ডের সঙ্গে খেরসনকে যুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ের জন্যই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নগরী খেরসন। এ নগরী ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে যাওয়ার প্রবেশদ্বার। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় বাহিনী ধীরে ধীরে এই নগরীর উপকণ্ঠে ভূখন্ড পুনর্দখল করেছে। তাদের আক্রমণের মুখে রুশ বাহিনী প্রতিরোধ লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টার পর গত মাসের মাঝামাঝিতে বেসামরিক লোকজনদের প্রথম নগরীটি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল রাশিয়া। এবার মস্কোর রেড স্কয়ারে শুক্রবার এক বক্তব্যে খেরসন পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ‘গোলাবর্ষণ ও হামলার ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া উচিত।’ খেরসন ঘিরে নিপ্রো নদীর আশপাশের গ্রাম ও শহরগুলো থেকে বাসিন্দাদের রাশিয়ার মূল ভূখন্ডে সরিয়ে নিয়েছে মস্কো সমর্থিত প্রশাসন। ওদিকে, খেরসন পুনরুদ্ধারে ছক কষেই এগোচ্ছে ইউক্রেন। লড়াইয়ের জন্য সেনাদের প্রস্তুতিও চলছে। তারা খেরসন থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিতে পারবে বলে আশাবাদী। ইউক্রেনের পদাতিক বাহিনীর সেনা কমান্ডার ওলেহ ট্রেঞ্চ বলেন, আসছে শীতের মধ্যেই রুশ শত্রুদের হটানো যাবে বলে তার আস্থা আছে। তবে তাদের হটিয়ে দেওয়াটা এত সহজ হবে না বলেই মনে করেন পশ্চিম খেরসনে যুদ্ধের সম্মুখভাগে থাকা এই ইউক্রেনীয় কমান্ডার। কারণ, তিনি কিংবা তার বাহিনীর কেউই মনে করেন না যে, রুশ বাহিনী সহসা কিংবা চুপিসারে খেরসন ছেড়ে চলে যাবে, এমনকি ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সেখানে সহজেই ঢুকতে দেবে। এ থেকেই আঁচ করা যায়, আসছে সপ্তাহে খেরসনে ঘনিয়ে আসছে একটি তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অপছায়া। ওলেহ বলেন, ‘তারা (রুশ বাহিনী) লড়াই চালিয়ে যাবে। তারা তাদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করবে যতক্ষণ তাদের সেটি করার সক্ষমতা থাকবে। লড়াইটা হবে তুমুল।’ খেরসনে রাশিয়া-সমর্থিত প্রশাসনের উপ-প্রধান কিরিল স্ট্রেমোউসভও জোর লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, রুশ বাহিনী লড়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। রাশিয়ার আরটি টেলিভিশনে কিরিল বলেন, ‘আমরা খেরসন ছেড়ে দিলে তা হবে এক বড় ধরনের ধাক্কা।’

সর্বশেষ খবর