তুরস্কের বিরুদ্ধে ৪০ বছর ধরে বিদ্রোহ চালানো কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র রাজনৈতিক দল কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) অস্ত্রসমর্পণ ও দল বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে দলটির কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালান দল বিলুপ্ত করে দিতে বাইরে থাকা নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় অস্ত্র পরিত্যাগ ও দল আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়ার এ ঘোষণা এলো, বলছে বিবিসি। তুরস্কের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই কুর্দি, তাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেছিল পিকেকে। পরে তারা সেখান থেকে সরে এসে কুর্দি অঞ্চলগুলোর আরও স্বায়ত্তশাসন এবং কুর্দিদের অধিকার রক্ষায় বেশি মনোযোগ দেওয়া শুরু করে। তাদের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র পিকেকেকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে দেখে। দল বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া বিবৃতিতে এ কুর্দি গেরিলারা বলেছে, তারা তাদের ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে’, তাই ‘সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ পরিত্যাগ করা হচ্ছে’। এখন থেকে কুর্দিদের যাবতীয় সংকটের ‘সমাধান গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমেই করা যাবে’, পিকেকে-সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা এএনএফে এমনটাই বলেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি। ফেব্রুয়ারিতে ৭৬ বছর বয়সি ওজালান তাঁর বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করে সংগঠন গুটিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। পিকেকের এই নেতা ১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে মর্মর সাগরের একটি দ্বীপে কারাগারের নির্জন সেলে বন্দি আছেন। জেল থেকে লেখা চিঠিতে তিনি ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অভীষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা ও তার বাস্তবায়নে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ঐকমত্যই মূল পথ।’ -রয়টার্স
দল বিলুপ্ত করার বিনিময়ে ওজালান ও তাঁর সমর্থকরা কী পাবেন তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি, তবে এ সিদ্ধান্তের পথ ধরে ওজালান জামিনে ছাড়া পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তুর্কি সেনাদের হাতে পিকেকে ব্যাপক মার খাচ্ছিল; অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ইরাক ও সিরিয়ায় সশস্ত্র এ দল এবং তার সহযোগীদের কাজ করাও কঠিন হয়ে উঠছে। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান যদি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান তাহলে তারও কুর্দিপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন লাগবে। দেশটিতে পরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৮ সালে হওয়ার কথা। পিকেকের নিজেদের বিলুপ্ত করে দেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে এরদোগানের একে পার্টি। পিকেকের অস্ত্রসমর্পণ ও দল বিলুপ্তির কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নজরদারিতে হওয়া উচিত মন্তব্য করে তারা একে ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্কের’ পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও অভিহিত করেছে, বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।