বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

গাজায় হাজারো এতিম শিশুর আর্তনাদ

গাজায় হাজারো এতিম শিশুর আর্তনাদ

যুদ্ধের ভিতর জন্ম। এমন হাজারো শিশু পিতা-মাতাকে হারিয়েছে। এমনও আছে অনেক শিশু ইনকিউবেটরে। তাকে বুকে তুলে আলিঙ্গন করার জন্য পিতা বা মাতা কেউই বেঁচে নেই। ইসরায়েলের বিমান হামলায় মারা যান হান্না নামে এক মা। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার একটি কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ করানো হয়। তার এ সন্তানকে গাজার কেন্দ্রস্থলে দিয়ের আল বালাহতে অবস্থিত আল আকসা হাসপাতালে দেখাশোনা করছেন নার্স ওয়ারদা আল আওয়াহদা। তিনি বলেন, এ সন্তানটিকে আমরা হান্না আবু আমশা নামে ডাকি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। চলমান যুদ্ধে বহু শিশু এভাবে পিতা-মাতাকে হারিয়েছে। গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। যে অভিযানে গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধ গাজার অর্ধেকের বেশি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে সাড়ে ১১ হাজারের বয়স ১৮ বছরের নিচে ছিল। আরও বহু মানুষ আহত হয়েছে। যাদের অনেককে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। যদিও গাজা যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র পাওয়া খুবই কঠিন। তবে ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে ২৪ হাজারের বেশি শিশু বাবা অথবা মা বা উভয়কেই হারিয়েছে। গাজায় এখন প্রতিটি প্রাণ ত্রাণের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় প্রায় ১৭ লাখ মানুষ এখন গৃহহীন। তবে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মূল উদ্বেগ গাজার প্রায় ১৯ হাজার শিশুকে নিয়ে। যারা এতিম। এমনকি তাদের দেখাশোনা কারার মতো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক স্বজনও নেই। ইউনিসেফ প্যালেস্টিনিয়ানের

জনসংযোগবিষয়ক প্রধান জনাথন ক্রিক্স বলেন, ‘এসব শিশুর বেশির ভাগকেই তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। হামলায় তারা তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে। এমনকি তাদের পরিবারের কেউই বেঁচে নেই। তাদের লালনপালনের দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হচ্ছে চিকিৎসক এবং উদ্ধারকারীদের। ওই নার্স বলেন, হান্না আবু আমশার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি আমরা। কোনো আত্মীয়ের সাক্ষাৎ মেলেনি। তার পিতার কী হয়েছে আমরা জানি না।

১০ বছর বয়সী ইবরাহিম আবু মোস পায়ে মারাত্মক ক্ষতে ভুগছে। তার পেটে আঘাত লেগেছে ক্ষেপণাস্ত্রের।

বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলে সে তাতে আহত হয়। মারা যান মা, দাদা ও বোন। তাদের কথা স্মরণ করে হাউমাউ করে কাঁদে সে। হোসেনের পরিবারের কাজিনরা একসঙ্গে খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন তারা বালুতে দাফন করা কবরস্থানের কাছে গিয়ে বসে থাকে। স্কুলকে আশ্রয় কেন্দ্র বানানো হয়েছে। তার কাছেই দাফন করা হয়েছে মৃতদেহ। পরিবারের শিশুরা সবাই পিতা বা মাতাকে অথবা উভয়কেই হারিয়েছে। আল বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা আবেদ হোসেন বলেন, আমার মায়ের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে। এতে তার দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। কয়েকদিন ধরে বাড়ির ধ্বংসাবশেষের ভিতর থেকে তার দেহাবশেষ কুড়িয়ে বেড়াচ্ছিলাম। একপর্যায়ে বলা হয়, আমার ভাই, আঙ্কেল এবং পুরে পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছে। এ খবর শুনে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আবেদের চোখের চারপাশে কালো দাগ। রাতের বেলায় ঘুমিয়ে থাকলে ইসরায়েলি গোলার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে যায় তার। তখন খুব একা মনে হয় নিজেকে। আবেদ হোসেন বলে, মা-বাবা বেঁচে থাকতে আমি ঘুমাতে পারতাম। তাদের হত্যা করা হয়েছে। তাই এখন আর ঘুমাতে পারি না। আমি সব সময় বাবার পাশেই ঘুমাতাম।

সর্বশেষ খবর