ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি টানেল থেকে আরও ছয় জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল দেশটির সামরিক বাহিনী বলেছে, সেখানে ইসরায়েলি সেনারা পৌঁছানোর অনেক আগে এদের হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হয়নি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগরি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের প্রাথমিক অনুমান হচ্ছে, আমরা তাদের কাছে পৌঁছানোর অল্প সময় আগে হামাসের সন্ত্রাসীরা তাদের হত্যা করেছে।’ তিনি জানান, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার ভূগর্ভে ছয় জিম্মির মৃতদেহ পাওয়ার পর সেগুলো ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। বাকি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে আছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, যে ছয়জন জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তাদের মধ্যে ইসরায়েলি-আমেরিকান গোল্ডবার্গ-পোলিনের লাশও আছে। জো বাইডেন বলেছেন, এ খবর শুনে তিনি বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। নিহত গোল্ডবার্গ-পলিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আইডিএফ বলেছে, ‘তাঁদের সবাইকে গত বছর ৭ অক্টোবর জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং হামাস গাজা উপত্যকায় তাঁদের হত্যা করেছে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘৭ অক্টোবর ইসরায়েলে শান্তির জন্য যে গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে যেসব নিরপরাধ মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়, হার্শ তাঁদের একজন।’ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জত আল-রেশিক বলেছেন, এসব মৃত্যুর জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করা ইসরায়েল দায়ী। রিয়ার অ্যাডমিরাল হাগরি জানান, কয়েকদিন আগে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বেদুঈন সম্প্রদায়ের সদস্য জিম্মি কায়িদ ফারহান আলকাদিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ওই দিন থেকেই গাজায় ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তারপর থেকে প্রায় ১১ মাস ধরে চলা তাদের নির্বিচার আক্রমণে ৪০৬৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৯৪০৬০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
আট ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শুরুর আগেই হামলা গাজায়, মৃত অন্তত ৪৮ : ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ অব্যাহত গাজায়! শনিবার ইসরায়েলের হানায় সেখানকার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে পোলিও টিকাকরণের জন্য দৈনিক আট ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েলি সেনা। তা শুরুর আগেই নতুন করে হামলায় প্রাণ হারালেন বহু মানুষ।
গাজায় পোলিও টিকাদান কার্যক্রম শুরু : অবশেষে গাজায় শুরু হয়েছে পোলিও টিকাদান কার্যক্রম। ২৫ বছরের মধ্যে গাজায় প্রথম পোলিও শনাক্ত হওয়ার পর ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে জাতিসংঘ গাজার ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া শুরু করেছে। ইসরায়েল ও হামাস তাদের ১১ মাসের যুদ্ধে সংক্ষিপ্ত বিরতি দিতে সম্মত হওয়ার পর গতকাল এ কার্যক্রম শুরু হলো। খবর বিবিসির। টিকাদান কর্মসূচির জন্য টানা তিন দিন অন্তত আট ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি থাকবে। তবে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এই বিরতি চতুর্থ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রয়োজন পড়তে পারে।
তিন ইসরায়েলি পুলিশ নিহত : অধিকৃত পশ্চিম তীরে বন্দুকধারীর হামলায় তিন ইসরায়েলি পুলিশ নিহত হয়েছেন। গতকাল হেবরন শহরের কাছে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগলে তারা নিহত হন।