একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যচ্ছে ইসরায়েল ও লেবানন পরিস্থিতি। যোগাযোগের যন্ত্র পেজার ও ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণ হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুড়েছে লেবাবনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। মুহুর্মুহু রকেট হামলায় ইসরাইলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে লাখ লাখ ইসরায়েলি আশ্রয় কেন্দ্রে পালিয়েছেন। হিজবুল্লাহর এ হামলার পর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের সব স্কুল ও সমুদ্র সৈকত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কয়েকটি রকেট উত্তরের শহর হাইফাতে গিয়ে পড়েছে। সেখানে অন্তত তিনজন আহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি গাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। ইসরায়েলের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রবিবার সকালে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তাদের যুদ্ধবিমানগুলো। হিজবুল্লাহর সক্ষমতা এবং সামরিক অবকাঠামোর ‘ক্ষতিসাধন ও দুর্বল’ করার জন্য তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, রবিবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে লেবাননের ভূখন্ড থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে একযোগে প্রায় ২০টি প্রোজেক্টাইলের প্রবেশ শনাক্ত করা হয়েছে। এরপর সকাল ৬টার দিকে লেবানন থেকে আরও প্রায় ৮৫টি প্রোজেক্টাইল ছোড়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্নেল নাদাভ শোশানি এএফপিকে বলেছেন, রকেটগুলো ধেয়ে আসার সময় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লাখ লাখ মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। এর আগে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, লেবানন থেকে ছোড়া রকেটে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের একাধিক স্থাপনা ও বাড়িঘরে আগুন ধরে গেছে। ইসরায়েলি জরুরি মেডিক্যাল সেবা সংস্থা বলেছে, রকেটের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় হাইফা শহরের বাসিন্দা।
এদিকে মুহুর্মুহু রকেট হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা উত্তরাঞ্চলের সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের মাঝে লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে সর্বশেষ এ উত্তেজনায় ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লে. কর্নেল শোশানির মতে, এ সংঘাত লাখ লাখ শিশুর ওপর প্রভাব পড়বে। মেডিকেল শিল্পে কর্মরত ইসরায়েলি বাসিন্দা প্যাট্রিস ওলফ এএফপিকে বলেন, হাইফায় বহু সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে... আর অফিসগুলোও জনশূন্য।
তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে আরও বেশি চাপ আসছে। ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের গোষ্ঠীটির ওপর চাপ প্রয়োগ করায় এটি আরও তীব্র হয়ে উঠছে। রকেট হামলার জবাবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ‘হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা’ অব্যাহত রেখেছে। শনিবার আইডিএফ লেবাননের ২৯০টি স্থানে হামলার কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ওই অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হামাস-শাসিত গাজা উপত্যকার বদলে লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর ওপর তাদের সামরিক অভিযানের ফোকাস ঘুরে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।