রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামনের ‘কয়েক দিনের মধ্যেই’ একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের এক উপদেষ্টা। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দুই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ‘শিগগির’ সশরীরে দেখা হওয়ার ‘ সম্ভাবনা’ রয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনটা বলার কয়েক ঘণ্টা পর ক্রেমলিন থেকে এ বার্তা এলো, জানিয়েছে বিবিসি।
যুদ্ধবিরতিতে রাজি হও, না হলে আরও নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়াকে বেঁধে দেওয়া ট্রাম্পের এ সময়সীমা শুক্রবার শেষ হতে যাচ্ছে। তার আগে বুধবার মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হয়। এর পর থেকেই ওয়াশিংটনে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক ‘আসন্ন’ বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। উইটকফ এর আগেও চারবার মস্কো সফর করেছিলেন এবং প্রতিবারই ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে ভালো খবর আসছে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। যদিও এখন পর্যন্ত শান্তি আলোচনায় বড় কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্প-পুতিনের পাশাপাশি ট্রাম্প-পুতিন-ভলোদিমির জেলেনস্কি বৈঠক নিয়েও বেশ আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে বুধবার রাতে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, তিন নেতার বৈঠকের ‘খুব ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে। পুতিনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা উষাকভ জানান, মস্কোতে বুধবার উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রসঙ্গ এসেছে। তবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা বলেননি তিনি। রুশ গণমাধ্যমগুলো বলছে, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে পুতিনের ‘আগ্রহ নেই’ বলেই মনে হচ্ছে। এদিকে জেলেনস্কি আবার আলোচনায় ইউরোপকে রাখতে চাইছেন। ইউক্রেনের এ প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি বলেছেন, শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দুটি দ্বিপক্ষীয় ও একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে আলোচনা চলছে। ‘ইউক্রেন বৈঠককে ভয় পায় না এবং রাশিয়ার দিক থেকেও এ ধরনের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে চায়,’ এক্সে বলেছেন তিনি। উষাকভ জানান, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকের স্থান নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, বিস্তারিত পরে জানানো হবে। বৈঠক নিয়ে সব পক্ষ কাজও শুরু করেছে। গত মাসে ট্রাম্প বিবিসিকে বলেছিলেন, উইটকফের চারবারের সফরের পরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি পুতিনের ওপর হতাশ, যদিও শুরুর দিকে তিনি আশাবাদ দেখেছিলেন। বুধবার এ কারণেই তাকে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। ‘আমি একে ব্রেক থ্রু বলছি না। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এ নিয়ে কাজ করছি। হাজার হাজার তরুণ মারা পড়ছে, আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাই,’ সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছিলেন তিনি। বুধবার উইটকফ-পুতিন বৈঠকের পর ক্রেমলিন সাদামাটাভাবে বলেছিল, আলোচনা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে এবং দুই পক্ষের মধ্যেই ‘সংকেত’ আদান-প্রদান হয়েছে। এদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি উইটকফের সফর নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন, ওই ফোনালাপে ইউরোপের নেতারাও ছিলেন। ইউক্রেনের এ প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া শান্তির ব্যাপারে তখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেবে যখন তার অর্থ ফুরিয়ে যেতে শুরু করবে। এতসবের মধ্যেও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে ইউক্রেনে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সামরিক বাহিনী একের পর এক গ্রাম দখলেও নিয়ে নিচ্ছে। মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের ওপর বাড়তি ২৫% শুল্কও বসিয়েছেন। নয়াদিল্লি রাশিয়ার তেল কিনে ক্রেমলিনের যুদ্ধের খরচ জোগাচ্ছে বলে কিছুদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অভিযোগ করতে দেখা যাচ্ছিল। -বিবিসি