যুক্তরাষ্ট্রের চালানো পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০তম বার্ষিকীতে জাপানের নাগাসাকির মেয়র শিরো সুজুকি বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাত অবসানে ব্যবস্থা নিতে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্টের ওই পারমাণবিক বোমা নাগাসাকিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল, প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল আনুমানিক ৭৪ হাজার মানুষের। তার আগে ৬ আগস্ট আরেকটি পারমাণবিক বোমায় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমাকেও নরককুণ্ডে পরিণত করেছিল। নারকীয় এ হামলাগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি দ্রুততর করতে ভূমিকা রেখেছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ‘সংঘাত আর বিভাজনের এক নিষ্ঠুর চক্রে বিশ্বজুড়ে দ্বন্দ্বগুলো তীব্রতর হচ্ছে। আমরা যদি এ পথেই চলতে থাকি তাহলে শেষ পর্যন্ত নিজেদের পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে,’ ৮০ বছর আগের ঘটনার স্মরণে দেওয়া এক শান্তি ঘোষণায় মেয়র শিরো সুজুকি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। নাগাসাকিতে ওই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি যেমন হয়েছিল, তেমনি পরে বোমার তেজস্ক্রিয়তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ লিউকেমিয়াসহ নানান গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়েও মারা পড়েছিল। হিরোশিমায় মার্কিন পারমাণবিক বোমায় আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। -রয়টার্স
তবে নাগাসাকির বোমাটি ছিল হিরোশিমার চেয়ে বড় ও বেশি শক্তিশালী, যার প্রভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অসংখ্য এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। পরে শহরটি নতুন করে গড়া হয়, সেখানেই এক মিনিট নীরবতায় শুরু হয় ৮ দশক আগের নারকীয় ঘটনার স্মরণ। বিশ্বকে শান্তির বার্তা দিতে পারমাণবিক হামলার পর প্রথমবার একসঙ্গে বেজে ওঠে নাগাসাকির যমজ ক্যাথেড্রালের ঘণ্টাও। গতকাল এ অনুষ্ঠানে ছিল প্রতীকী ‘জল নিবেদন’ও, ৮০ বছর আগে বোমার বিস্ফোরণে যাদের চামড়া পুড়ে যাচ্ছিল, তারা পানির জন্য কাতর হয়ে পড়েছিল। তাদের স্মরণে হামলায় বেঁচে যাওয়াদের একজনসহ বিভিন্ন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ‘জল নিবেদন’ করেন। নাগাসাকির এ স্মরণ অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং কয়েক ডজন দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ‘‘১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট একটি আনবিক বোমা এ শহরের ওপর পড়েছিল। এখন, সেই দিনের ৮০ বছর পর আজ, কে ভেবেছে আমাদের বিশ্ব এরকম হয়ে পড়বে? ‘শক্তির মুখোমুখি শক্তি’ এমন বিবাদগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে,” বলেছেন সুজুকি। নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার দিন বিস্ফোরণস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ছিলেন হিরোশি নিশিওকা। স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি সেদিনের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন। -রয়টার্স