ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যে খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা ভেঙে সংঘর্ষ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর একজন মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনায় গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করে শান্ত থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ নিরাপত্তায় যৌথভাবে কাজ করছে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও পৌরসভায় থমথমে রয়েছে পরিস্থিতি।
বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। জানা যায়, গত শনিবার এক দফা সংঘর্ষের পর সব দলমতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত না মেনে রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি জেলায় পুনরায় অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। পরে গতকাল সকাল থেকেই খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জায়াগায় পাহাড়ি উচ্ছৃঙ্খল জনতা ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ উসকানিতে টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। সকালে সেনাবাহিনীর টহল দল গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ সরানোর সময় ৫০ থেকে ৬০ জন পাহাড়ি সেনাবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরে ২০০ থেকে ৩০০ পাহাড়ি সংঘবদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর পুনরায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ১২ জন সেনা সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী প্রথমে মাইকের মাধ্যমে সবাইকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা সরে না যাওয়ায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সেনাবাহিনী লাঠিচার্জ করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা এ সময়ে আরও মারমুখী হয়ে উঠলে সেনা টহলদল ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করে পাহাড়ি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। একপর্যায়ে বাঙালি ও পাহাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে এবং গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় কয়েকটি স্থানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুরের দিকে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের উঁচু স্থান থেকে সংঘর্ষরত জনতার ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে গুলি করে। এতে দুই পাহাড়ি নিহত হওয়ার খবর প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এ সময় পাহাড়িরা বাঙালিদের ১০-১২টি বসতবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, রামগড় এলাকায় গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিজিবি টহল দল সড়ক অবরোধ সরানোর সময় উচ্ছৃঙ্খল পাহাড়ি জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। উচ্ছৃঙ্খল পাহাড়িদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপে বিজিবির একজন অফিসারসহ কয়েকজন সদস্য আহত হন। সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিনজন পাহাড়ি নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বলেন, খাগড়াছড়ি হাসপাতালের মর্গে তিনজনের লাশ রয়েছে। তাদের গুইমারা থেকে আনা হয়েছে। তবে এখনো তাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি।