২০২৬ সালে পবিত্র হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। হজযাত্রীদের সুবিধা ও আবাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে এই প্যাকেজগুলোর খরচ সর্বনিম্ন ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ধর্ম উপদেষ্টা জানান, হজ প্যাকেজ-১-এ (বিশেষ) হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরিফের বহিরাঙ্গন থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজিদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ এক রুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২-এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি+ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
হজ প্যাকেজ-২, হজ প্যাকেজ-১-এর চেয়ে কিছুটা সুলভ হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরিফের বহিরাঙ্গন থেকে ১.২ থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজিদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ এক রুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২-এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।
এ ছাড়া হজ প্যাকেজ-১ ও হজ প্যাকেজ-২-এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫ থেকে ৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২ থেকে ৩০ দিন।
হজ প্যাকেজ-৩ একটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কার আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনার মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। এক রুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫-এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরিফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতে এসি বাসের ব্যবস্থা থাকবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।
উপদেষ্টা বলেন, এই প্যাকেজটি সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে কখনো সরকারি মাধ্যমে হাজিদের জন্য আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়। এ ছাড়া আমাদের দেশের হজযাত্রীদের দীর্ঘ বছর ধরে যে এলাকায় রাখা হতো সেই এলাকার হোটেল বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে ভবিষ্যতে আমাদের দেশের হজযাত্রীদের আজিজিয়া এলাকাতেই রাখতে হবে।
এদিকে হজ এজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এই প্যাকেজটি গ্রহণ করে এজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। সে অনুসারে বেসরকারি প্যাকেজের যাত্রীদের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা সঙ্গে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, গত বছর বিমানভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। হজযাত্রীদের সুবিধার্থে এবার বিমানভাড়া ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমানভাড়া কমানো হলেও ২০২৬ সালের হজে সৌদি সরকার স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ১৩০ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৭০ টাকা। এ বছর সৌদি রিয়ালের বিনিময়হারও বেড়েছে। গত বছর সৌদি রিয়াল ছিল ৩২ টাকা ৫০ পয়সা, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা। এসব বিবেচনায় নিয়ে ২০২৬ সালের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সালের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে।
উল্লেখ্য ২০২৫ সালে হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১-এর মাধ্যমে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর প্যাকেজ-২-এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।