ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বাকি আর মাত্র চার মাস। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রথমবারের মতো ভোটের মাঠের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে জুলাই বিপ্লবীদের সাত মাস বয়সি রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনি আবহ তৈরি হয়নি দলটির ভিতর। নেই প্রস্তুতিও। নেতারা বলছেন, নতুন সংবিধান বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেলে প্রস্তুতি শুরু করবেন। আর না হলে নেবেন নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত।
এনসিপির পূর্ববর্তী সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয় গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তারা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানান। এরপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে এনসিপির। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সেদিন ঘোষণা করেন এনসিপির প্রথম লক্ষ্য সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা। এজন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রণয়ন করতে হবে নতুন সংবিধান। সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সমন্বয় সভায় নাহিদ ইসলাম তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে আটকে আছে এই সনদ। এনসিপি বলছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতি হিসেবে গণপরিষদ নির্বাচন এই সংকটের সর্বোত্তম সমাধান। গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার টেবিল থেকেই সমাধান আশা করছেন এনসিপির নেতারা। তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতিকে নতুন সংবিধানের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে এনসিপির কোনো অর্জন থাকবে না। জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা দলটি যদি নতুন সংবিধানের দাবি বাস্তবায়ন করতে না পারে তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার যথার্থতা হারাবে। তাই গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা অন্য যে কোনো উপায়ে হলেও নতুন সংবিধান প্রণয়ন এনসিপির অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন সংবিধানের নিশ্চয়তা না পেলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বয়কট করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না দলটির। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমরা ঐকমত্য কমিশন গঠনের আগে থেকেই গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও এর আইনি ভিত্তি নির্মাণে ঐকমত্য কমিশন এবং অপরাপর রাজনৈতিক দল যেসব পদ্ধতির কথা বলছে, তার কোনোটাই টেকসই হবে না। এ সংকট সমাধানে সবচেয়ে ভালো উপায় গণপরিষদের আদলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তিনি আরও বলেন, এনসিপি শুরু থেকেই সংস্কারপন্থি দল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমাদের লক্ষ্য ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোর বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়ন।
আমরা চাই না ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেখে যাওয়া সংবিধানের ফাঁকফোকর গলে আবারও কোনো রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠুক। আমরা ভোটের মাঠে নামার আগে খেলার নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে কি না- নিশ্চিত করতে চাই। যাতে বাংলাদেশকে আর কোনো রক্তক্ষয়ী জুলাই দেখতে না হয়।
দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, বিদ্যমান সংবিধান একটি ফ্যাসিবাদী সংবিধান। এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবারও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো ফিরে আসবে। ব্যর্থ হবে জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগ। গত এক বছর ধরে আমরা নতুন সংবিধানের জন্য আন্দোলন করছি। আমরা আশা করছি অচিরেই আলোচনার টেবিলে এর সমাধান মিলবে। তবে সন্তোষজনক সমাধান না এলে পরিস্থিতি বুঝে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।