নেপালে ‘জেন-জি’ আন্দোলনে নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানী কাঠমান্ডুর ট্রিচিং হাসপাতাল থেকে তাদের লাশ আনা হয় পশুপতিনাথ আর্যঘাটে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানের মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হয় আন্দোলনে প্রাণ হারানো এই তরুণদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নেপালের নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী ওম প্রকাশ আর্যল এবং জ্বালানি, অবকাঠামো ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী কুলমান ঘিসিং। তারা নিহতদের লাশ জাতীয় পতাকা বিছিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া আর্মড পুলিশ ফোর্স নিহতদের সামরিক সম্মান প্রদর্শন করে স্যালুট প্রদান করে। নিহতদের কয়েকজনকে তাদের নিজ নিজ জেলার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে স্থানীয়ভাবে তাদের দাফন বা সৎকার সম্পন্ন হয়। এর আগে, জেন-জি আন্দোলনে নিহতদের ‘শহীদ’ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি, ১৭ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এদিন সারা দেশে সরকারি ছুটি পালিত হয় বলেও জানানো হয়েছে।-কাঠমান্ডু পোস্ট
প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টেম্বর, নেপালের তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নামে দুর্নীতি, সরকারবিরোধী নিপীড়ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে। আন্দোলনের প্রথম দিনেই সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে প্রাণ হারান বহু মানুষ। পুলিশের টিয়ার গ্যাস, জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলির মুখে অনেকেই আহত হন এবং কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু চাপের মুখেও আন্দোলন থেমে যায়নি। পরদিন আরও জোরালোভাবে বিক্ষোভ শুরু হলে বিভিন্ন স্থানে সরকারি ভবন ও নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। চূড়ান্ত চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে ১২ সেপ্টেম্বর, আন্দোলনের মধ্যেই সুশীলা কার্কি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সাবেক এই বিচারপতি এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করছেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন করে দায়িত্ব থেকে মুক্তি চাই : ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দায়িত্ব থেকে মুক্তি চান বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বিবিসিকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন, জেন জি-র আন্দোলন চলাকালীন হত্যা ও সহিংসতার তদন্ত এবং আগের সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন বিবিসির নেপালি বিভাগের বিনিতা দাহালের সঙ্গে। সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে বিবিসি তার কাছে জানতে চেয়েছিল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে ২০২৬ সালের ৫ মার্চ। সময়মতো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে তাকে? সুশীলা কার্কি এর জবাবে বলেন, আমি তো বলেইছি যে, আমি দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করব। আপনি জানেন যে সাধারণ মানুষের দিক থেকে কতটা চাপের মুখে এ সরকার গঠিত হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে পদ থেকে সরে যেতে চাই। আগামী কয়েক দিনে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় করে তুলব আমরা। প্রথমত, ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। একটা পুরোনো ভোটার তালিকা আছে কিন্তু সেটা হালনাগাদ করতে হবে। যদি দিনরাত কাজ করতে পারি তাহলে ছয় মাসে সেটা করা সম্ভব। যেদিন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেব, সেদিন থেকে আমি মুক্ত।