আল্লাহ মানব জাতির স্রষ্টা। মানুষের প্রতি স্রষ্টার মমত্ববোধ সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি সব সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। সৃষ্ট জীবের নিজেদের মধ্যে ঈর্ষা, বিদ্বেষ ও পক্ষপাতমূলক মনোভাব থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু মহান আল্লাহ এসব হীনমন্যতা থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্ত। আমাদের এই দুনিয়ায় সত্যিকারের শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের মুখাপেক্ষী হতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ন্যায্য শান্তি ও সত্যিকারের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজন বৈষম্যহীন আইন। একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আইনই বৈষম্য বা পক্ষপাতহীন হিসেবে দাবি করতে পারে।
এমন আইন দুটি কারণে মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়। প্রথমত, মানুষ সম্পূর্ণরূপে সত্যকে চিহ্নিত করতে পারে না অথবা ব্যক্তিগত পক্ষপাত থেকে মুক্ত হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, মানুষের প্রকৃতি তাকে অন্যের ওপর প্রাধান্য দিতে বাধ্য করে। তাই আইন-কানুন যখন তার পক্ষে হয়, সে তা গ্রহণ করে, আর যখন তার স্বার্থের পরিপন্থী হয়, তখন সে তা প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহর তৈরি আইন মানুষ নৈতিকভাবে মানতে বাধ্য হয়। এ আইন যেহেতু অলঙ্ঘনীয় সেহেতু আল্লাহর আইনের প্রতি চেতনার গভীর থেকে মানুষ অনুগত থাকে। এমন উপযুক্ত আইন আসতে পারে কেবল স্রষ্টার কাছ থেকে এবং তা বাস্তবায়নে পুরস্কারের নিশ্চয়তা থাকে। অমান্য করার শাস্তিও নির্ধারিত থাকে, এর প্রতি মানুষের বিশ্বাসও থাকে নিরঙ্কুশভাবে। এই আইনের মাধ্যমে তারা স্রষ্টাকে চিনতে পারে। এভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত রূপে স্রষ্টাকে চেনার অনেক উপাদান ও কার্যকারণ আল্লাহর আইনে বিদ্যমান। এমনকি ইবাদতও নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে এ আইন প্রণেতাকে মানুষ ভুলে যেতে না পারে। মানুষ প্রতি মুহূর্তে সর্বদর্শীরূপে স্রষ্টাকে মনে রাখবে এ যুক্তিতে মানুষকে স্রষ্টার প্রতি আহ্বান করা যেমন ইবাদতের লক্ষ্য তেমনি ন্যায়বিচারের লক্ষ্যও অভিন্ন। আল্লাহ আমাদের তার সব বিধানের প্রতি অনুগত থাকার তৌফিক দান করুন। লেখক : ইসলামী গবেষক।