২১ জুন, ২০২১ ১০:৪৭
ধর্মতত্ত্ব

জ্ঞানার্জনে কোরআনের শিক্ষা জরুরি

এম এ মান্নান

জ্ঞানার্জনে কোরআনের শিক্ষা জরুরি

পবিত্র কোরআন হলো মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত গাইডলাইন। যা নাজিল হয়েছিল রসুল (সা.)-এর ওপর। হেরা পর্বতে আল্লাহর ধ্যানে থাকা অবস্থায় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) হাজির হন রসুল (সা.)-এর কাছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি রসুল (সা.)-কে কোরআনের যে আয়াতটি প্রথমে পৌঁছে দেন সেটি হলো- ‘পড়, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। মানব জাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক সম্মানিত, যিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তারা জানত না।’ সুরা আলাক-১-৫।

কোরআনের এ আয়াতটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যারা আল্লাহকে সব ক্ষমতার মালিক এবং জগৎ মহাজগতের সবকিছুর স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাস করেন, যারা মুহাম্মদ (সা.)-কে তার রসুল বলে স্বীকার করেন, যারা জিবরাইল (আ.)-কে ফেরেশতা হিসেবে বিশ্বাস করেন তাদের জন্য ওই আয়াতটি দিকনির্দেশনামূলক। পবিত্র কোরআনের সূচনা ‘পড়’ এই হুকুমসংবলিত শব্দের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য জ্ঞান অর্জনকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন তা এ আয়াতটিতে স্পষ্ট। অথচ রসুল (সা.) নিজেই ছিলেন অক্ষরজ্ঞানহীন। তিনি অক্ষরজ্ঞানের অধিকারী না হলেও আল্লাহর ইচ্ছা এবং জাগতিক ও পারলৌকিক জ্ঞানের ভান্ডার কোরআনের বদৌলতে উম্মতদের আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাসের কারণেই মোমিনদের অবশ্য কর্তব্য হলো- জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হওয়া। কারণ আমাদের যিনি স্রষ্টা তিনি মানবজাতির চলার পথের গাইডলাইন হিসেবে যে পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন তাতে প্রথমেই পড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ পড়া অর্থাৎ জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কোনোরকম হেলাফেলার অবকাশ নেই। আমাদের  উচিত হবে নিজেদের যেমন জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হওয়া, তেমন আমাদের শিশু সন্তানকেও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। সে যাতে কোরআন হাদিস সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে তা নিশ্চিত করা। বড় হয়ে কর্মজীবনের উপযোগী শিক্ষাও সন্তানের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। যাতে সন্তান বড় হওয়ার পর জীবিকার জন্য কারোর মুখাপেক্ষী না হয়। রসুল (সা.) অপরের কাছে হাত পাতাকে অপছন্দ করতেন। তিনি তার উম্মতদের স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।

আমরা জানি, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সেই জাতি তত উন্নত। শিক্ষা ব্যতিরেকে কোনো জাতির উন্নতি কল্পনা করা যায় না। জাগতিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের সফলতা অর্জনে শিক্ষার বিকল্প নেই। এ জন্য নৈতিক ও আদর্শভিত্তিক ঐশী শিক্ষার সমন্বিত শিক্ষা প্রয়োজন। শিক্ষা, অজ্ঞতা ও অন্ধকার দূর করে মানুষকে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথ দেখায়। মানবতার মুক্তির মহাগ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ শব্দটি যেহেতু ‘পড়’ সেহেতু মানুষের কল্যাণ সাধনে শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
পবিত্র কোরআনে রসুল প্রেরণের অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার কথা বর্ণনা করে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই ওই সত্তা যিনি নিরক্ষরদের মাঝে স্বয়ং তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন যিনি তাদের তাঁর (আল্লাহর) আয়াত পাঠ করে শোনান, তাদের আত্মিক পরিশুদ্ধ এবং তাদের কিতাব (আল্লাহর বাণী) ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা স্পষ্ট অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল।’ সুরা জুমু’আ-২।

ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জন করা ও শিক্ষাদীক্ষায় দক্ষ ও সুশিক্ষা লাভ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। এ জন্য ইসলামের প্রথম যুগের মনীষীগণ শিশুদের একত্রিত করে শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে পৌঁছার প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন। হজরত হিশাম ইবনি উরওয়াহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করে যে, তিনি তার সন্তানদের একত্রিত করে বলেন, হে আমার সন্তানেরা! তোমরা ইলম শিক্ষা কর। যদিও তোমরা আজ জাতির ছোট শিশু। আশা করা যায় অচিরেই তোমরা পরবর্তীদের বয়োজ্যেষ্ঠতে পরিণত হবে। আর কোনো বয়োবৃদ্ধের জন্য এর চেয়ে খারাপ কোনো অবস্থা নেই যে, কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে তার কাছে কোনো ইলম (তথ্য) পাওয়া যাবে না। -সুনানে দারিমি। এ ব্যাপারে রসুল (সা.) এর দৌহিত্র হজরত হাসান (রা.)-এর একটি উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনাও বর্ণিত আছে  হজরত শুরাহবিল বিন সাঈদ (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত হাসান (রা.) তার ছেলে এবং ভাতিজাকে ডেকে বললেন, হে আমার বৎস এবং ভাতিজা, তোমরা আজ জাতির ছোট শিশু-অচিরেই তোমরা পরবর্তীদের বয়োজ্যেষ্ঠতে পরিণত হবে। অতএব তোমরা ইলম শিক্ষা কর। তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি তা বর্ণনা করতে অথবা মুখস্থ করে সংরক্ষণ করতে সক্ষম না হয় সে যেন তা লিখে রাখে এবং তা নিজ ঘরে রেখে দেয় (সংরক্ষণ করে)। -সুনানে দারিমি। উল্লিখিত দুটি ঘটনা শিশুদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানের দলিল ও প্রমাণের নির্দেশনা।

শিক্ষা অর্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ করা হয়েছে, যদি তোমরা কোনো বিষয় সম্পর্কে না জেনে থাক তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর। সুরা নাহল-৪৩। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, হজরত আনাস ইবনি মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)। অপাত্রে (যে জ্ঞানের মূল্যায়ন করে না তাকে) ইলম দান করা শূকরকে মণি, মুক্তা ও স্বর্ণের অলংকার পরানোর নামান্তর। -সুনানে ইবনি মাজাহ। আল্লাহ আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর