কোরআন আল্লাহতায়ালার কিতাব, হজরত মুহম্মদ (সা.) আল্লাহর শেষ নবী। ইসলামের দুশমনরা যেখানেই যায় সেখানেই দেখে মুসলমানের মধ্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার, যা তাদের ধর্মে নেই। এ ব্যাপকতার কারণ হলো ইসলামের নীতি-আদর্শের মধ্যে যে মানবতা, সেবা, দয়া-মহব্বত ও সহযোগিতার বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে নেই। বিশ্বের যেখানেই যাবেন মুসলমান পাবেন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের অবস্থান এ রকম নয়। এ কারণেই দুশমনরা মুসলমানদের শিক্ষা ও আদর্শ ধ্বংসের চেষ্টা করছে। তারা একটা সেøাগান সৃষ্টি করেছে- ‘নারী ও পুরুষের সমান অধিকার চাই’। আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করতে চাই- নারীর অধিকার যতটা ইসলামী শিক্ষার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, ততটা কি অন্য শিক্ষায় আছে? এর বিশ্লেষণ করতে গেলে কয়েক ঘণ্টা লাগবে। মানুষের মৌলিক অনেক বিষয় রয়েছে যার সমাধান একমাত্র ইসলামই দিয়েছে। যেমন বৈবাহিক বিষয়। এ ক্ষেত্রে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে, কাকে বিয়ে করবে, মেয়ে কেমন হবে, ছেলে কেমন হবে, সাক্ষী কেমন হবে, মোহর কত হবে, মোহর কখন আদায় করতে হবে ইত্যাদি। অনেকে লাখ লাখ টাকা মোহর নির্ধারণ করে, এরপর তা আদায় করে না, স্ত্রীর হক নষ্ট করে। অথচ ইসলাম এ ব্যাপারে স্বামীদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছে। স্ত্রীর মোহর আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। অন্য কোনো ধর্মে এর কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ইসলামী শিক্ষা এত ব্যাপক যে পায়খানা কীভাবে করতে হয় এ বিষয় থেকে নিয়ে মানব জীবনের সব ক্ষেত্রে সমগ্র বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা আমাদের মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত আছে। মাদরাসার পাঠ্য বিষয়। আমাদের মাদরাসাগুলোয় শ্রেণিভিত্তিক ধারাবাহিকভাবে বেহেশতি জেওর, মালাবুদ্দা মিনহু, নুরুল ইজাহ, শরহে বেকায়া, হেদায়া পড়ানো হয়। এগুলোর মধ্যেই জীবনের যাবতীয় নিয়ম-কানুন, বিধিবিধান বর্ণিত আছে। বিশেষ করে হেদায়া কিতাবে মানব জীবনের কোনো বিষয়ের আলোচনাই অনুপস্থিত নেই। আকিদা, ইবাদত, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানবিক আচার-আচরণ, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার, প্রশাসন, সামরিক বাহিনী প্রভৃতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা বিদ্যমান। এ কথাগুলো বললাম এজন্য যে এ দেশের অনেক পাশ্চাত্য শিক্ষার বুদ্ধিজীবী এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকেও বলতে শোনা যায়, আমরা শুধু সারা বছর বেহেশত ও দোজখের শিক্ষা দিই। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করলাম। আসুন, দেখে যান আমরা কী কী শিক্ষা দিই। আলেমরা কি বিয়ে সম্পর্কে বলেন না? মেয়েদের সমস্যা সম্পর্কে বলেন না? ছেলেদের সমস্যা সম্পর্কে বলেন না? অন্যায়ভাবে হত্যা করা, অন্যের মাল লুণ্ঠন করা, অন্যের সম্মানে আঘাত হানা ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা করেন না? আমি এই ৩০ বছরে জীবনের কোন প্রসঙ্গটা আলোচনা করতে বাকি রেখেছি বলুন তো আপনারা! জেনে রাখুন, আলেমরা রাজনীতিকদের মতো শুধু মুখেই বলেন না, আমলেও বাস্তবায়ন করেন। যারা কটাক্ষ করে বলে, মাদরাসায় শুধু বেহেশত আর দোজখ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাদের জানা নেই যে কোরআনের ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিটি পৃষ্ঠাতেই বেহেশত-দোজখের আলোচনা করা হয়েছে। আপনাদের জীবনদানকারী, প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক, বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, বুঝশক্তি দানকারী মহান আল্লাহ যেখানে জান্নাত-জাহান্নামের কথা কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠায় একাধিকবার উল্লেখ করেছেন সেখানে আলেমরা সেই আলোচনা করলে আপনাদের মুখে বিদ্রƒপের সুর বাজে কেন? এত বড় সাহস আপনাদের কোত্থেকে আসে? আল্লাহর গজব ও পাকড়াওয়ের ব্যাপারে সাবধান হয়ে যান! এ পৃথিবী হলো বিদেশ। আমরা এখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকব না। জান্নাত আমাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহর রসুল (সা.) বলে গেছেন, দুনিয়ায় তোমরা পথিকের মতো। আমরা এ উভয় ঠিকানার হকিকত ও স্বরূপ শিক্ষা দিই ছাত্রদের। আমাদের শিক্ষায় আখেরাত প্রাধান্য পায়। কারণ সেটি চিরস্থায়ী ঠিকানা বা আবাসস্থল। এ শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায়। যে ব্যক্তি স্থায়ী ঠিকানার কথা বাদ দিয়ে শুধু অস্থায়ী আবাসের ফিকির করে তাকে বুদ্ধিমান বলা যায় না। তাকে অর্বাচীন বলতে হয়। মুসলমানদের সজাগ ও কঠোর থাকা উচিত এবং নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর অনড় থাকা উচিত। ইসলাম শুধু আখেরাতের কথা বলে না, বরং দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জীবনের শান্তি ও কামিয়াবির কথা। বলে। আল্লাহ আমাদের সহি সমঝ দান করুন।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ