শিরোনাম
৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৮:০৫

ইসলাম ধর্মে শিষ্টাচার

মো. আমিনুল ইসলাম

ইসলাম ধর্মে শিষ্টাচার

মানুষই একমাত্র প্রাণী যার বিবেক বুদ্ধি ও জ্ঞান আল্লাহ তাকে দান করেছেন। এ জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি দিয়েই মানুষ নিজের জীবনকে পরিচালনা করে। সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। তাই কোরআন মানুষকে তার চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে জীবন পরিচালনা করার তাগিদ দিয়েছে বারবার। আল্লাহ বলেন, এভাবেই আল্লাহতায়ালা তাঁর আয়াতগুলো তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন, আশা করা যায় তোমরা তা অনুধাবন করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৪২)। আমরা সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে বসবাস করতে হলে আমাদের সবাইকে সামাজিক রীতিনীতি ও শিষ্টাচার মেনে জীবন পরিচালিত করতে হয়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন রসুল (সা.) এর নীতি ও আদর্শ অনুকরণের জন্য পবিত্র কোরআনে তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, রসুল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক। (সুরা হাশর, আয়াত ০৭)। পিতা-মাতার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী আচরণ করতে হবে সে বিষয়েও আল্লাহ কোরআনে বলেন, তোমরা পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। যদি তোমাদের কাছে তাঁদের কোনো একজন বা উভয়েই বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হয় তাহলে তাদের সঙ্গে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না এবং কখনো তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ও ভদ্রজনোচিত কথা বল। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩)। আমাদের জীবনে শিষ্টাচার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান। একজনের বাসায় গেলে তার অনুমতি নিয়ে সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে হয়। আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ,  তোমরা কখনো নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতি না চেয়ে এবং তাদের সালাম প্রদান না করে গৃহে প্রবেশ কর না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আশা করা যায় তোমরা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। (সুরা আন নুর, আয়াত ২৭)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ সমুন্নত রাখার জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। কখনো যদি মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতের সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে কী করতে হবে তা কোরআনের সুরা হুজরাতের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানি করা হবে। (সুরা হুজরাত, আয়াত ১০)। পবিত্র কোরআনের সুরা হুজরাতে আরও বর্ণিত হয়েছে- কোনো নারী যেন অন্য কোনো নারীকে বিদ্রƒপ না করে, কেউ যেন কাউকে নিন্দা না করে, কাউকে মন্দ নামে না ডাকে, অন্যের সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ না করে, অন্যের গোপন বিষয়ে পেছনে না লাগে, আর কারও বিরুদ্ধে পরচর্চা বা গিবত না করে। আমাদের সমাজে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হলো পরের নিন্দা করা আর তার পেছনে লাগা। অথচ আল্লাহ বলেন, দুর্ভোগ রয়েছে প্রত্যেক পেছনে ও সামনে নিন্দাকারী ব্যক্তির জন্য। (সুরা আল হুমাযাহ, আয়াত ০১)।

আমাদের উচিত জীবনের মূল্যবান সময়গুলো অন্যের দোষ না খুঁজে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। কাউকে মন্দ নামে ডাকা, মন্দ ধারণা পোষণ করা, কারও বিরুদ্ধে পরচর্চা করা কোরআনে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও আমরা এই কাজগুলো করে আনন্দ পাই। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের ময়দানে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। (মুসলিম শরিফ, ৬৭৪৬)। আমাদের সমাজের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হলো গিবত বা পরনিন্দা করা। আল্লাহ বলেন, তোমাদের কেউ যেন কারোর কোনো গিবত বা পরনিন্দা না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাক। (সুরা হুজরাত, আয়াত ১৩)। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে কিছু নীতি, নিয়ম, শিষ্টাচার ও রীতিনীতির মাধ্যমে জীবন পরিচালিত করতে হয়। যাতে সমাজে সবসময় একে অপরের সঙ্গে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গভীর হয় এবং নৈতিকতা, শালীনতা মেনে জীবন পরিচালিত হয়। তাহলে প্রতিটি মানুষের জীবন হবে নির্বিঘ্ন ও শঙ্কামুক্ত।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর