সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয় হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল দিনটিকে। আরবের মক্কা নগরীর অভিজাত কুরাইশ গোত্রে জন্মগ্রহণকারী ওই মহাপুরুষ মানব জাতিকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রচার করেন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের অমিয় বাণী। তিনি ছিলেন সহনশীলতার অনন্য উদাহরণ।
মহানবী পৃথিবীতে এমন একসময় আবির্ভূত হন যখন আল্লাহর শিক্ষা ভুলে মানব জাতি বিপথে পরিচালিত হচ্ছিল। আরবসহ সারা বিশ্বের মানব সমাজের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল হানাহানি ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা। সুনীতি ও সুবিবেচনা মানব সমাজ থেকে নির্বাসনে যাচ্ছিল। উপেক্ষিত হতো নারীর সম্মান। পবিত্র ভূমি মক্কায় তিনি যে সময় জন্মগ্রহণ করেন, সে সময় আরব উপদ্বীপ ও সংলগ্ন জনপদগুলোর অবস্থা ছিল ভয়াবহ। মহানবী ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শুদ্ধাচারী। অসত্য, অন্যায় ও অকল্যাণের পথ থেকে মহানবী (সা.) থাকতেন যোজন যোজন দূরে। অসত্য ও অবিশ্বস্ততা আরব সমাজের নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হলেও তিনি মক্কাবাসীর কাছে সম্বোধিত হতেন ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী হিসেবে।
ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়। মানব জাতিকে আলোর পথে উদ্বুদ্ধ করেছে এ ঐশীগ্রন্থ। শান্তির সমাজ গঠনে আল কোরআন ও মহানবীর শিক্ষা সব যুগেই প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। এই মহাপুরুষ মদিনায় দুনিয়ার প্রথম কল্যাণ রাষ্ট্রের সূচনা করেন। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব ধর্মের মানুষের সম-অধিকার স্বীকৃত হয়। তিনি ছিলেন মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। যে রাষ্ট্রে কেউ সংখ্যাগুরু বা কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলে বিবেচিত হতো না। সব ধর্মের মানুষকে সমান অধিকার দেওয়ার জন্য তিনি রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখেন।মদিনাকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি মহানবী (সা.)। অসাম্প্র্রদায়িকতা ও সহিষ্ণুতা ছিল এ মহাপুরুষের শিক্ষা। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীতে আমরা মহানবী (সা.)-এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। বৈষম্যহীন দেশ গড়ার তথা শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য তাঁর সহিষ্ণুতার শিক্ষা আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য মহানবী (সা.)-এর আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা আজকের যুগে সবচেয়ে বেশি।