বাগেরহাটকে বলা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের শহর। বাগেরহাট জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যার বেশির ভাগই খানজাহান আলী (রহ.)-এর শাসনামলে নির্মিত। সিঙ্গাইর মসজিদ বাগেরহাটের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম। ১৯৭৫ সালে মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘোষণা করা হয়।
সিংগাইর মসজিদ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৫ মিটার। ষাটগম্বুজের মতো সিঙ্গাইর মসজিদও খানজাহান আলী (রহ.) নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। সেই হিসাবে মসজিদটি খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে নির্মিত।
সিঙ্গাইর মসজিদ এক গম্বুজবিশিষ্ট। বৃহদাকার গম্বুজ দ্বারা তা আচ্ছাদিত। মসজিদের চারদিকে রয়েছে বক্রাকার কার্নিশ। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে আছে তিনটি খিলানযুক্ত দরজা।
দরজাগুলো বরাবর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মিহরাব। মধ্যভাগের দরজাটির মতো মধ্যভাগের মিহরাবটি বড় ও প্রধান। প্রধান মিহরাবটি পোড়ামাটি দিয়ে নকশা করা হয়েছে। পোড়ামাটির নকশা আছে দরজাগুলোর পাশেও। মিহরাবের দুই দিকে ছোট দুটি স্তম্ভ এবং উপরিভাগে একটি বহুখাঁজবিশিষ্ট খিলান আছে।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণে আছে একটি করে প্রবেশপথ। দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে মসজিদটি ১২.৮ মিটার করে। ঐতিহাসিক এই মসজিদের দেয়ালগুলো ইটের তৈরি, যার পুরুত্ব ২.১০ মিটার। দেয়ালের প্রতিটি কোনার বাইরের দিকে গোলাকৃতির বর্ধিত বুরুজ আছে। বুরুজ ছাড়া বাকি মসজিদ বর্গাকার। সাধারণ বৈশিষ্ট্যের বিচারে সিঙ্গাইর মসজিদ ষাটগম্বুজ মসজিদের অনুরূপ। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালের মাঝের অংশে একটি অলংকৃত মিহরাব আছে। মসজিদে একটি বেষ্টনী প্রাচীর ছিল, যার চার কোনায় চারটি বুরুজ ছিল। এর পূর্ব দিকে একটি তোরণবিশিষ্ট প্রবেশপথ ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংস্কারের আগে মসজিদটি দীর্ঘকাল পরিত্যক্ত ছিল। পুরো স্থাপনাটি আগাছায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিল। বর্তমানে সেখানে নিয়মিত নামাজ হয়।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ