মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তৃত সীমানার নিরাপত্তা, জীবনাযাত্রার মানোন্নয়ন ও গতি স্বাভাবিক রাখা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার জন্য মুসলিম শাসকরা খনিজ পদার্থের অনুসন্ধান ও তার উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেন। তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই শিল্পের বিশেষ উন্নয়ন সাধিত হয়। ইসলাম আগমনের পূর্ব থেকে আরব উপদ্বীপের ইয়ামান লৌহশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। পারস্যের খাওরিজম, ফারগানা, সমরকান্দের খনিজ পদার্থ ও খনিজ শিল্পের বিশেষ কদর ছিল বিশ্ববাজারে।
তবে তার বেশির ভাগই ব্যবহৃত হতো সমরাস্ত্রশিল্পে। মুসলিম শাসকরা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে এই শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ফলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন খনিজ শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠে। মুসলিম শাসকদের অনুদানে আরবের মসুল, হারান ও নাসিবাইনে বৃহৎ লৌহ ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে।
যেখানে উন্নতমানের চেইন, ছুরি, কিরিচ, পরিমাপ যন্ত্র, রোলার, প্রকৌশলবিদ্যা-চিকিৎসাবিদ্যা-বিজ্ঞানগবেষণার উপকরণ তৈরি হতো। (আল মাকদিসি, পৃষ্ঠা-১৪১ ও ১৪৫; আল হাদারাতুল ইসলামিয়া ফি করনির রাবে আল হিজরি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩০)
মসুলে চীনামাটির পাত্র, মুদ্রা ও তামার শিল্পের বিকাশ হয়। দামেস্কে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ধাতব মুদ্রার কারখানা ছিল। সিজিস্তান ও সমরকান্দ উন্নতমানের তৈজসপত্র তৈরিতে মানুষের আস্থা অর্জন করে।
উন্নতমানের প্রদীপ তৈরি জন্য ফিলিস্তিন এবং তালা তৈরি জন্য খাওরিজম, ইস্পাহান, নিশাপুরের বিশেষ খ্যাতি ছিল। তৎকালীন পারস্যের ফারগানা শহরে স্থাপিত হয় খনিজ পদার্থের বৃহৎ শোধনাগার। যেখানে সোনা, রুপা, খনিজ তেল, লোহাসহ অন্যান্য খনিজদ্রব্য শোধন করা হতো। (তুরাসুল ইসলাম, পৃষ্ঠা-১৮১; হামদানি, মুখতাসারু কিতাবিল বুলদান, পৃষ্ঠা-২৫৪)
মুসলিম শাসকরা খনিজ পদার্থ অনুসন্ধানে শক্তিশালী দল গঠন করেন। তারা জায়হুন নদীর উপকূলে ও সমরকান্দের খাসনাক উপত্যকায় স্বর্ণ এবং বলখের বামিয়ান উপত্যকায় তামা ও সিসা অনুসন্ধান করত।
বুজখুশান অঞ্চলে হীরা, স্ফটিক, লাজওয়ার্ড, বেলে পাথর ও কঠিন পাথরের খনি আবিষ্কৃত হয় মুসলিম শাসনামলে। এ ছাড়া কিরমান, ইয়েমেন, বৈরুত, হারব, রিহাব ও মিসরেও গুরুত্বপূর্ণ খনি আবিষ্কৃত হয়। (ইয়াকুবি, আল বুলদান, পৃষ্ঠা-২৯২)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন