ইসলাম প্রচার করা গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। এর মাধ্যমে অনেক মানুষ হেদায়াত পায়। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সামর্থ্য অনুযায়ী ইসলাম প্রচার করা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৩২১৫)
যুগে যুগে ইসলাম প্রচারে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁরা ছিলেন ঘরের ভেতরে আলোকবর্তিকা আর প্রয়োজনে মাঠের বীরাঙ্গনা। ইসলাম প্রচার, প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় তাঁদের অবদান ও আত্মত্যাগ কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
ইসলাম গ্রহণে নারীর অবস্থান
রাসুলুল্লাহ (সা.) নবুয়ত প্রাপ্তির প্রথম দিকে তাঁর নিকটাত্মীয় এবং পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তাঁদের মধ্যে খাদিজা (রা.) প্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তিনি প্রথম নামাজ আদায় করেন। তিনি প্রথম কিবলার অনুসারী ছিলেন।
এরপর পর্যায়ক্রমে ওরাকা ইবনে নওফেল (রা.), আলী (রা.), জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) এবং আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইসলামের ছায়াতলে আসেন। (সিরাতুল মুস্তফা : ১/১৩৭)
খাদিজা (রা.) শুধু সর্বপ্রথম ইসলামই গ্রহণ করেননি, বরং এর বহু আগে থেকেই তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাহস, মানসিক শক্তি ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট প্রথম ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঘরে এসে খাদিজা (রা.)-কে বলেন, আমাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দাও।
এরপর সব ঘটনা শুনে খাদিজা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারি করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (বুখারি, হাদিস : ৩)
সুতরাং তিনি ছিলেন একাধারে প্রিয়তমা স্ত্রী, সমর্থক এবং সহযোগী ইসলাম প্রচারক।
ইসলাম গ্রহণে নারীদের বায়াত
নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো বায়াত বা আনুগত্যের অঙ্গীকার। ইসলাম পুরুষের পাশাপাশি নারীর জন্যও দায়িত্ব, কর্তব্য ও নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছে। এর প্রমাণ মেলে ইসলামের সূচনালগ্নেই নারীদের বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রথম বায়াত নবুওয়াতের দশম বছরে হজের মৌসুমে সংঘটিত হয়। তখন মদিনার ছয়জন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ঈমান ও আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। এটাই ছিল আকাবার প্রথম শপথ। নবুওয়াতের ১৩তম বছর মদিনার ৭৫ জন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ৭৩ জন পুরুষ এবং দুজন নারী ছিলেন। এটাই ছিল ইতিহাসে নারীদের প্রথম বায়াত গ্রহণের ঘটনা। নারী দুজনের একজন ছিলেন উম্মে উমারা নুসায়বা বিনতে কাব। দ্বিতীয় জন ছিলেন উম্মে মানী আসমা বিনতে আমর। (ইবনে হিশাম : ১/৪৪০-৪৪১)
ইসলামের প্রথম শহীদ নারী
যুগে যুগে যাঁরা আল্লাহর রাহে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন সুমাইয়া (রা.)। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশিষ্ট সাহাবি ইয়াসির (রা.)-এর স্ত্রী ও আম্মার (রা.)-এর জননী। ইসলাম গ্রহণের অপরাধে মক্কার কাফিররা তাঁদের ওপর কঠোর জুলুম নির্যাতন করত। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আম্মার, তাঁর পিতা ইয়াসির (রা.) এবং তাঁর মা সুমাইয়া (রা.)-কে বিপদগ্রস্ত দেখতেন, তখন বলতেন, হে ইয়াসির পরিবার, সবর কর। কখনো বলতেন, হে আল্লাহ, তুমি ইয়াসির পরিবারকে ক্ষমা করো। আবার কখনো বলতেন, তোমাদের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ, তোমাদের আশা পূর্ণ হবে। তাঁদের হৃদয়ে ঈমানের অটল দৃঢ়তা এতটাই ছিল যে, কোনোভাবেই তাঁদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো যায়নি। জুলুম-নির্যাতনের এক পর্যায়ে আবু জাহেল বর্শা দিয়ে সুমাইয়া (রা.)-কে আঘাত করে নির্মমভাবে শহীদ করে। এই মহান নারীর রক্তে সিক্ত হয় ইসলামের প্রথম শহীদির ইতিহাস। (সিরাতুল মুস্তফা : পৃ. ১৯৯)
সুমাইয়া (রা.) প্রমাণ করেছেন, একজন নারীর ঈমান ও ত্যাগ কতটা দৃঢ় হতে পারে। তাঁর এই আত্মোৎসর্গ পরবর্তী প্রজন্মের মুমিন নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে।
আসমা (রা.)-এর জীবন থেকে অন্য মুমিন নারীদের জন্য রয়েছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণা।
বিডি প্রতিদিন/মুসা