পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাইশ গজে ফের বিরোধী পক্ষ সেই নির্বাচন কমিশন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোট, পরের বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় দেখা গিয়েছে, সুষ্ঠু অবাধ ভোট করতে চাওয়া কমিশনকে বিরোধী পক্ষ ঠাউরে নেন তৃণমূল নেত্রী। এবারও বাংলার ভোটমঞ্চে একই দৃশ্য। নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার কমিশন ৩৭ জন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে। তারপর ২৪ ঘণ্টা পার হবার আগেই মমতার আক্রমণের নিশানায় তারা। শুক্রবার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন পাঠিয়ে দিল্লি আমাকে অপমান করেছে।’’ কমিশনের সিদ্ধান্তকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে মমতা বলেন, ‘‘পুলিশকে বদলি করে কোনো লাভ নেই। যাকে তাদের জায়গায় দেবেন, তারাও তো আমাদেরই লোক!’’
বরাবরই নির্বাচন কমিশন বিধানসভা ভোটের দায়িত্বে থাকে। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। তাহলে দিল্লি পাঠিয়েছে বলে কী বোঝাতে চেয়েছেন মমতা? মমতার ঘনিষ্ঠ কারও কারও বক্তব্য, উনি আসলে এটাকে দিল্লির রাজনৈতিক চক্রান্ত বলতে চেয়েছেন। সেই চক্রান্তে বিজেপির সঙ্গে সিপিএম, কংগ্রেসও রয়েছে— এটাও বোঝাতে চেয়েছেন তার বক্তৃতায়। তাই কখনও বলেছেন, ‘‘কমিশনকে দেখে মনে হচ্ছে, তারা সিপিএমের হয়ে ভোটটাও দিয়ে দেবে।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘যে সব জায়গায় বদলি হয়েছে, দেখে নিন। কোনোটায় সিপিএম লড়ছে। কোনোটায় বিজেপি। কোনোটায় কংগ্রেস।’’
ক্ষমতায় আসার পরে মমতা প্রথম বড় নির্বাচনের মুখোমুখি হয়েছিলেন ২০১৩ সালে, পঞ্চায়েত ভোটে। সেবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট করা নিয়ে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে পাঞ্জা কষতে সুপ্রিম কোর্ট অবধি যায় রাজ্য সরকার। শেষে হেরেও যায়। এর এক বছর পরে লোকসভা ভোটের প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন কঠোর পদক্ষেপ করা শুরু করলে ময়দানে নেমে তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেছিলেন মমতা। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, তৎকালীন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে এই নিয়ে রাজ্যের তরফে বিবৃতি পর্যন্ত দিতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সূত্রই জানাচ্ছে, সে সময় সঞ্জয় মিত্রই বেঁকে বসেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝান, কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থার বিরুদ্ধে এমন জিহাদ সম্ভব নয়।
কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এই বিষোদ্গার নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ দিন জানিয়েছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কমিশনকে বারবার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আরও যে সব অফিসার পুরোপুরি শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন, তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানোর দাবি করছি।’’
কমিশনের কোপে যে আরও অফিসার পড়তে পারেন, সে ইঙ্গিত অবশ্য এ দিনই কমিশন সূত্রে মিলেছে। পাশাপাশি পাঁচ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে পর্যবেক্ষক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের ময়দানে নজরদারির জন্য নামিয়ে দিচ্ছে তারা। বৃহস্পতিবারই এই ঘোষণা করেছিল কমিশন। শুক্রবার দুপুরের পরে সেই সব বিশেষ দলের প্রতিনিধিরা রাজ্যে আসতে শুরু করেন। এ দিন যারা এসেছেন, সব প্রশ্নে তারা একটাই জবাব দিয়েছেন, রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোই তাদের মূল লক্ষ্য। এ দিনই নির্বাচন কমিশন থেকে এক বিবৃতিতে জানান হয়েছে, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার এবং জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই বিশেষ পাঁচটি দল কাজ করবে। আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা