বাংলা নববর্ষে প্রথমবারের মতো কলকাতার রাস্তায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শনিবার সকাল আটটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলী বাগান থেকে যাদবপুর পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়। এতে অংশ নেন সমাজের সকল পেশার মানুষ, ছিলেন শিল্পী, শিক্ষার্থীরাও।
শোভাযাত্রার আয়োজনে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও কলকাতার নববর্ষ উদযাপন কমিটি। বাংলাদেশের মতোই এখানেও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষা এক সুস্থ সংস্কৃতির বার্তা তুলে ধরাই লক্ষ্য বলে জানান উদ্যোক্তারা।
বর্ষবরণের এই উৎসবকে পূর্ণ মাত্রা দিতে গতকাল রাতেই গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর গোটা রাস্তা আলপনা দিয়ে সাজানো হয়। নৃত্য, গান, রণ-পা, ছৌনাচ, চলমান নাটকসহ লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত ধারাকে সঙ্গ করেই এগোয় এই শোভাযাত্রা।
ধুমধাম করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে শান্তিনিকতনেও। নাচ, গান, আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণে মেতে উঠে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এদিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভিটা কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতেও সকাল থেকে সঙ্গীত,আবৃত্তি সহযোগে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
নতুন বছরের জন্য কালীঘাট মন্দিরে পূজা দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পূজা দেওয়ার পর ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করেন তিনি। এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করেই কলকাতার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বের হয় প্রভাতফেরী। ভোর হতেই কালীঘাটের কালী মন্দির, দক্ষিণেশ্বর মন্দির, আদ্যাপীঠ, তারাপীঠসহ রাজ্যটির বিভিন্ন ধর্মস্থানে পূজা দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়েছিল।
অনেক বাড়িতেও এদিন লক্ষ্মী-গণেশের পূজা হয়। সঙ্গে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও। এমনকি অনেক নামী রেস্তোরাগুলিতেও বিশেষ বাঙালি ভোজেরও আয়োজন করা হচ্ছে। নস্ট্যালজিয়ার মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে মেনু। মোঁচার ঘন্ট, কলার বড়া, চিংড়ির মালাইকারি, শুক্তো, চকোলেট, সন্দেশ, রসগোল্লো আরও কতকি!
ভাষা ও চেতনা সমিতির আয়োজনে এদিন সকাল থেকে বর্ষবরণের উৎসব শুরু হয়েছে কলকাতার অ্যাকাডেমী অফ ফাইন আর্টসের সামনে। সকাল ৮টা থেকে পার্ক স্ট্রিট জাদুঘরের কাছে সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়ে শেষ হয় আকাডেমীর সামনে। সেখানেই সারা দিন ধরে চলবে কথা, কবিতা, নাচ, গান, নাটক, ছবি আঁকা। সঙ্গে থাকছে সস্তায় পান্তাভাত-শুঁটকি, মাছ-ভাত, আলু পোস্ত, আমপোড়া সরবত।
কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণেও আয়োজন করা হয় বর্ষবরণের উৎসব। গতকাল শুক্রবার বিকেলেই বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্র থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। পরে তা পার্ক স্ট্রীটের সাত মাথার ক্রসিং হয়ে মিশন প্রাঙ্গণ পর্যন্ত আসে। শোভাযাত্রায় অংশ নেন উপরাষ্ট্রদূত জকি আহাদসহ মিশনের কর্মকর্তারা। এরপর মিশন প্রাঙ্গণেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/১৪ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা