ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। কারণ এই অঞ্চলে হাজার হাজার কমংসংস্থানহীন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের উপস্থিতি ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের কাছেও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বাই প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গা আজ আমাদের সমস্যা, আগামীকাল আপনাদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এই অঞ্চলে আমরা যদি আরও কয়েক হাজার বেকার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে রেখে দিই, তবে সেটা আপনাদের কাছেও হুমকির কারণ হতে পারে’।
আলী জানান, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি বৈধ না অবৈধ-তা নয়। একদল মানুষকে সেদেশ (মিয়ানমার) থেকে উৎখাত হয়ে তাদের জীবন ধারনের জন্য আমাদের দেশে (বাংলাদেশ) আশ্রয় নিয়েছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, তাছাড়া আগে থেকেই আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা ছিলেন-সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় দশ লাখের বেশি হবে। রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছেন। যদিও তিনি পরিষ্কার করে একথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাটি সাময়িক এবং মিয়ানমারকেই এই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে, কারণ রোহিঙ্গারা শতাব্দীর পর শতাব্দী সেদেশেই বসবাস করে আসছেন’।
এই সমস্যা মেটাতে ভারতের আরও বড় ভূমিকা পালন করা উচিত বলেও মনে করেন এই বাংলাদেশি কূটনীতিক। তিনি জানান, ‘মিয়ানমারের সাথে ভারত কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে এবং আমরাও এই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সেদেশে ফেরত পাঠাতে কখনও যৌথভাবে কখনও আবার এককভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছি। '
রোহিঙ্গাদের বিপথগামী হওয়ার বিষয়টি নিয়েও এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তার অভিমত, ভুল মানুষের পাল্লায় না পড়ে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে থাকাটাই বেশি নিরাপদ। রোহিঙ্গারা যদি মধ্য এশিয়ায় চলে যায়, তবে জানি না এর শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কারণ অতীতে আমরা ইসলামিক স্টেট (আইএস)-কে দেখেছি তাই এই বিষয়টিতে আমি যথেষট উদ্বিগ্ন যে রোহিঙ্গারা যাতে ভুল পথে চালিত না হয়’।
বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী কোন বিচ্ছন্নতাবাদী সংগঠনের কোন কার্যকলাপ নেই বলেও দ্বিধাহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন মোয়াজ্জেম আলী। তিনি জানান, ‘সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন এবং একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা কোন সন্ত্রাসী সংগঠন নেই। শেখ হাসিনাও শক্ত হাতে এই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন’।
বিডি-প্রতিদিন/২৮ মার্চ, ২০১৮/মাহবুব