রাম নবনীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উত্তপ্ত পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল-রানিগঞ্জ শহর। বোমা, গুলি, টিয়ার গ্যাস থেকে শুরু করে মৃত্যু-কোন কিছুই বাদ যায়নি। গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে পশ্চিম বর্ধমানেই নিহত হয়েছে তিন জন।
আহতেরও সংখ্যাও নেহাত কম নয়, এর মধ্যে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (আইপিএস কর্মকর্তা)-র অবস্থা এতটাই খারাপ যে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য রাজ্যে। নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আসানসোলসহ জেলার বেশ কিছু জায়গায় এখনও জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা, বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মমতা ব্যানার্জির রাজ্য সরকারের কাছে গোটা ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
এরই মধ্যে শনিবার রানিগঞ্জ ও আসানসোলের সহিংসতা কবলিত এলাকার মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠি। আসানসোলের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। বিজেপির অভিযোগ, মমতার মুসলিম তোষণ নীতির কারণেই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। মমতার পাল্টা অভিযোগ হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শকে জাগাতেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করছে বিজেপি।
এসবের সত্যতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন থাকলেও এটা পরিস্কার যে সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বিগত বছর গুলির তুলনায় অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লোকসভায় জানায়, মমতার তিন বছরের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে ২৭ টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ৫ জন নিহত হয়, আহত হয় ৮৪ জন। পরের দুই বছরে সেই সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালে এ রাজ্যটিতে ৩২টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪ জন, আহতের সংখ্যা ২৫২। আর ২০১৭ সালে ৫৮ টি সহিংসতার ঘটনায় মৃত্যু হয় ৯ জনের আহত কমপক্ষে ২৩০ জন।
তবে ভারতের বিহার, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোর তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ততটা 'ভয়াবহ' নয়। গত তিন বছরে ভারতে ২২৭৬ টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় প্রাণ হারান ২৯৪ জন, আহত হয়েছেন ৬৯৬৯। ২০১৭ সালে সবেচেয়ে বেশি এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ৮২২ টি ঘটেছে, মৃত্যু হয়েছে ১১১ জনের।
বিডি প্রতিদিন/১ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা